1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
জীবনরহস্য উন্মোচন বারোমাসি কাঁঠালের
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৪ পূর্বাহ্ন

জীবনরহস্য উন্মোচন বারোমাসি কাঁঠালের

  • আপডেটের সময় : শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৮৯৫ পড়া হয়েছে

শীতকাল শুরু হয়েছে। এই ঋতুতে দেশে খুব বেশি দেশি ফল সাধারণত হয় না। বরই, আমলকী, সফেদা, আর কমলা হয় কোথাও কোথাও। জাতীয় ফল কাঁঠালের মুকুল আসে জানুয়ারিতে। পরিপক্ব কাঁঠাল আসে আরও দুই-তিন মাস পরে। কিন্তু বছর তিনেক আগে খাগড়াছড়ির রামগড়ের চা–বাগানে বারো মাস ফলন দেয়, এমন এক জাতের কাঁঠালের সন্ধান পান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। এখন দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা এই জাতের কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন।

নতুন জাতের এই কাঁঠালের নাম ‘বারি-৩’ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই জাতের কাঁঠালগাছ যাতে সারা দেশে হয়, ফল দেয়, সেই লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। গবেষণার ফলাফল চলতি মাসে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন প্ল্যান্ট সায়েন্স’ নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার পরের ধাপ হিসেবে রপ্তানিযোগ্য ও সহজে সংরক্ষণ করা সম্ভব—এমন জাতের কাঁঠাল উদ্ভাবনে গবেষকেরা কাজ করছেন।

 

 

বারোমাসি এই কাঁঠালের জীবনরহস্য উন্মোচনের (জিনোম সিকোয়েন্সিং) কাজটি যৌথভাবে করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি, ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, কানাডা ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বশেমুরকৃবির অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাই পৃথিবীতে প্রথম বারোমাসি কাঁঠালের একটি জাতের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছি। এর মধ্য দিয়ে রামগরের পাহাড়ে জন্মানো একটি কাঁঠালকে নিবন্ধনের মাধ্যমে নতুন জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই জাতের কাঁঠাল সারা বছর ফল দেয়। ফলন মৌসুমি কাঁঠালের চেয়ে চার গুণ বেশি। ফলটির স্বাদ ও পুষ্টিগুণ খুব ভালো।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘একটি দেশ একটি অগ্রাধিকার ফল’ শীর্ষক বৈশ্বিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির জন্য সবচেয়ে উপযোগী ফল হিসেবে কাঁঠালের কথা উল্লেখ রয়েছে। বছরে প্রায় ১০ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদন করে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

নতুন জাতের এই কাঁঠালের নাম ‘বারি-৩’ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
নতুন জাতের এই কাঁঠালের নাম ‘বারি-৩’ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটছবি: সংগৃহীত
তবে কাঁঠাল অতি পচনশীল ফল। তাই উৎপাদিত ফলের বড় অংশ পচে নষ্ট হয়। কাঁঠালের জাতের মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। কিন্তু কাঁঠাল শুধু এক মৌসুমের ফল। সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত কাঁঠালের কোনো বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফল। বারোমাসি কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচিত হওয়ায় জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে নানা স্বাদের ও বৈশিষ্ট্যের নতুন নতুন কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া দেশে কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশে এই উদ্ভাবন সহায়ক হবে।

বারোমাসি কাঁঠালের ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ‘ইলুমিনা সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফর্ম’ ব্যবহার করে বারোমাসি কাঁঠালের ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ করেছেন তাঁরা।

কাঁঠালের জিনোম আকার ১ দশমিক শূন্য ৪ গিগাবেজ জোড়া। বায়ো–ইনফরমেটিকস বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কাঁঠালের জিনোমে ফলের বৈশিষ্ট্য এবং বারোমাস ফল উৎপাদনকারী জিন ও ডিএনএ সিকোয়েন্সের স্বাতন্ত্র্য খুঁজে পেয়েছেন। এটি কাঁঠালের জিন প্রকৌশল বা মলিকুলার ব্রিডিংয়ে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষক দলটি বলছে, এই গবেষণায় কাঁঠালের মধ্যে বিশাল বৈচিত্র্য ও বারোমাস ফল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলো শনাক্ত হয়েছে। গবেষণার ফলাফল জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে বারোমাসি কাঁঠালের নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাত উদ্ভাবনে সহায়ক হবে। কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষের জন্য বারোমাসি ও ফলের নানা বৈশিষ্ট্যের জাত প্রয়োজন, যা কাঁঠালভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশের পূর্বশর্ত।

কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স ডাটা, যা গবেষকেরা জিন ব্যাংকে জমা দিয়েছেন, তা ভবিষ্যৎ জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণায় বিশেষভাবে কাজে লাগবে।

গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন অ্যান্ড্রু শার্প। তিনি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির গবেষক। অ্যান্ড্রু শার্প বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল নিয়ে মলিকুলার পর্যায়ে গবেষণা হয়নি। এটি পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফল। বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো একটি বারোমাসি জাতের কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স ও সম্ভাব্য জিনের শনাক্তকরণ কাঁঠালের গবেষণায় এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

অ্যান্ড্রু শার্প আরও বলেন, উন্নত স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানবিশিষ্ট কাঁঠালের জাত উদ্ভাবনের গবেষণায় এটা কাজে লাগবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে কাঁঠালভিত্তিক নতুন শিল্পের প্রসারের সম্ভাবনাও তৈরি হলো। যেহেতু বাংলাদেশের কাঁঠালের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জিন ব্যাংকে প্রকাশিত হয়েছে, এখন তা বিশ্বজুড়ে এই বিষয়ে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা গবেষণায় ব্যবহার করতে পারবেন। কাঁঠালের উৎপত্তিস্থল নির্ণয় ও কীভাবে কাঁঠাল বন্য অবস্থা থেকে মানুষের খাবার উপযোগী হলো, ভবিষ্যতে তা-ও জানা যাবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD