ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর মৌজায় একটি প্রভাবশালী মহল ফসলি জমির পাশে বেড়িবাঁধ দিচ্ছে। এতে পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়বে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এই বাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সাত কৃষক।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরনারায়ণপুর মৌজায় পাঁচ শতাধিক বিঘা কৃষিজমি আছে। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত শরিয়ত উল্লার ছেলে মো. তাহের মিয়া ও একই গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. রাসেল মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে চরনারায়ণপুর মৌজায় কিছু জমি কেনেন। এরপর তাঁরা দুজন মিলে চরনারায়ণপুর ও ভবানীপুর মৌজার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদী থেকে তিতাস নদে মিলিত হওয়া খালের এক পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এতে খালটি অস্তিত্ব হারিয়েছে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ওই বেড়িবাঁধের কারণে ওই এলাকার জমিগুলোয় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে শত শত বিঘা কৃষিজমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালীরা তাঁদের কথা শুনছেন না।
এর মধ্যে তাহের মিয়া ওই জমিতে পুকুর নির্মাণ শুরু করেছেন। পুকুরের পাড় বাঁধার কারণে পুকুরের পেছনের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আবার বর্ষাকালে পানি সরতে না পারলে সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি করছেন কৃষকেরা।
ভুক্তভোগী কৃষক লিয়াকত আলীর সেখানে প্রায় ২৮ বিঘা জমি আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এখানে চারদিক ঘুরিয়ে যে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে, এতে আমাদের জমিগুলোর পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই বাঁধের ভেতরে শত শত বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। চাষাবাদ না করতে পারলে আমরা না খেয়ে মরব। প্রভাবশালীরা আমাদের কথা শুনছেন না। আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বিষ দিন, না হলে জমি থেকে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন বলেন, ‘এখানে একটি খাল ছিল। একটি প্রভাবশালী মহল খালে মাটি ফেলে বেড়িবাঁধ দিয়েছেন। আমরা বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেই বাধা মানেনি। তারা বলেছিল, ব্রিজ করে দেবে। কিন্তু ব্রিজ করে দেয়নি। এ জন্য জমির পানিনিষ্কাশন হয় না। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাহের মিয়া বলেন, ‘এখানে কোনো খাল নাই। আমি নিজের জায়গায় বাঁধ দিয়েছি। এতে করে কৃষকদের কোনো ক্ষতি হবে না।’
মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, কৃষকেরা বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। তিনি সরেজমিনে বিষয়টি দেখবেন এবং কৃষকদের যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ‘চরনারায়ণপুরে ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। ২০১৯ সালে কৃষকেরা একবার ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন ইউএনওর নির্দেশে আমি তদন্ত করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে উঁচু বাঁধের কারণে কৃষকদের জমিতে পানি আসা-যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এখানে যদি আবার বড় বাধা তৈরি করা হয়, তাহলে কৃষিজমির ক্ষতি হবে। সেচের অভাবে জমিগুলো খালি পড়ে থাকবে। এটা কৃষির জন্য হুমকিস্বরূপ।’
আখাউড়ার ইউএনও অংগ্যজাই মারমা বলেন, কৃষকদের পক্ষ থেকে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো
Leave a Reply