রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা তিন মাঠের ১৬ কৃষকের মাঠের ফসল নষ্ট করেছে। গত শনিবার রাতে এসব খেতের পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ভুট্টা ও গম নষ্ট করা হয়েছে। তিন বছর ধরে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মাঠের ফসল এভাবেই নষ্ট করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা পশ্চিম পাড়া, খাগড়বাড়িয়া ও বাউসা ভেড়ালীপাড়া গ্রামের ১৬ কৃষক নিজ নিজ জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ভুট্টা ও গমের আবাদ করেছেন। এসব জমির পেঁয়াজ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু জমির রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য ফসল কেটে নষ্ট করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু জমির পেঁয়াজ পা দিয়ে পিষে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে গমখেত তছনছ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে খাগড়বাড়িয়া গ্রামের হোসেন আলীর পেঁয়াজ, বাউসা ভাড়ালীপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের পেঁয়াজ ও মটর, একই গ্রামের মামুনের রসুন ও মটর, বেলালের পেঁয়াজ, শোইবের রসুন, শহিদুল ইসলামের রসুন, জয় সরকারের মটর, ভুট্টা ও রসুন, দিঘা পশ্চিম পাড়ার, শামীমের পেঁয়াজ, সেলিমের গম, শহিদুলের গম, শাহীনের রসুন, সুরুজ আলী, কালাম, বিচ্ছাদ, মিলন ও এমারতের পেঁয়াজখেত নষ্ট করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলেন, কে বা কারা কী কারণে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেটি তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এ মাঠে তিন বছর ধরে একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। চক্রটি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
চাষি শামীমের মা শাহানারা বেগম জানান, তিনি দুপুরে নিজ খেতে যাওয়ার সময় সিদ্দিকের পেয়ারার জমিতে একটি ফিডের বস্তার ব্যাগ দেখেন। তার মধ্যে রাতে শিশিরে ভেজা একটি গামছা, একটি লুঙ্গি, কয়েলের ভাঙা অংশ ও একটি কলম পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, রাতে খেতের ফসল নষ্ট করতে গিয়ে শিশিরে ভিজে যাওয়া জিনিসপত্র ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।
বাউসার ভেড়ালীপাড়ার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। তিনি ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। পেঁয়াজ কেটে ফেলায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
চাষি বাউসা ভেড়ালীপাড়ার জয় সরকার বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে আমার জমির মটর, ভুট্টা, রসুন ও পেঁয়াজ কারা নষ্ট করেছে, ধারণাও করতে পারছি না।’
উপজেলার দিঘা পশ্চিম পাড়ার সরুজ আলী বলেন, ১৪ হাজার টাকায় জমি ইজারা নিয়ে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই আবাদ করেছেন। আর কীটনাশক কিনেছেন বাকিতে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, বুঝতে পারছেন না। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাউসা ইউনিয়নে ফসলের ক্ষতির ঘটনাটি জানার পর এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র : প্রথম আলো
Leave a Reply