চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় এঁটেল সমৃদ্ধ মাটি। এঁটেল ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ধান চাষাবাদে উপযোগী হলেও ধানের চারা উৎপাদনে এই জমিতে রয়েছে নানা সমস্যা। এঁটেল মাটিতে ধানের চারা উৎপাদন করতে পারছে না বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা।
বাধ্য হয়েই কেনা চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন, এঁটেল মাটিতে ধানের চারা উৎপাদন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। চারা উৎপাদন করা গেলেও লাগানোর আগে বীজতলা থেকে চারা ঠিকমতো তোলা যায় না। এঁটেল মাটির কারণে বেশিরভাগ চারা নষ্ট হয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের এই দুই উপজেলার কৃষকদের বেশিরভাগই ধানের চারা কিনে চাষাবাদ করে। পাশের জেলা রাজশাহীর তানোর, নওগাঁর মান্দা, সাপাহার, মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে আসে এসব ধানের চারা। গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর, আড্ডা বাজার ও নাচোল উপজেলার নাচেোল বাজার, হাটবাকইল বাজার, সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের শিমুলতলা বাজারে বসে ধানের চারার হাট।
এসব ধানের চারার হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয় চারা। এ বছর ৪০০-৪৫০ টাকা পোন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ধানের চারা। অথচ গত বছর তা ৩০০-৪০০ টাকা পোন দরে বিক্রি হয়েছে। ৮০টি আঁটিতে এক পোন ধরে এসব ধানের চারা বিক্রি হচ্ছে। তিন পোনে এক বিঘা জমি আবাদ করা যায়। জিরা (ছোট), স্বর্ণা, ব্রি-২৮ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চারা বিক্রি হয়।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর বাজারে ধানের চারা কিনতে এসেছেন পাশের গ্রাম কাজল কেশর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমাদের বরেন্দ্র জমিতে ধানের চারা উৎপাদন করা যায় না, বিষয়টি তেমন না। উৎপাদন করা গেলেও এঁটেল মাটির কারণে চারা ওঠানো কষ্ট হয়। এমনকি ওঠানোর সময় অনেক চারা নষ্ট হয়। তাই আর ঝামেলা না করে প্রতি বছর কিনে নিয়েই চাষাবাদ করি।
নেজামপুর ইউনিয়নের হাটবাকইল গ্রামের কৃষক জহরুল ইসলাম জানান, এঁটেল মাটিতে চারা উঠাতে অনেক সময় লাগে। এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি সময় লাগে। তাই এখানকার বেশিরভাগ কৃষকই চারা কিনে চাষ করে। চারা নষ্ট হওয়া ও চারা ওঠাতে সময় বেশি লাগার থেকে কিনে নেওয়াই ভালো সমাধান।
পাশের জেলা নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়ার ধানের চারা বিক্রেতা আজাহার আলী বলেন, বোরো মৌসুমের প্রায় মাসখানেক সময় গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে ধানের চারা বিক্রি হয়। এই লক্ষ্যে আমরা শুধু ধানের চারা উৎপাদন করি। প্রত্যেক বছরের এই সময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব মোড়ে ধানের চারা বিক্রি হয়। দৈনিক ৭০০-৮০০ আঁটি ধানের চারা বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদিয়া আফরীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের এঁটেল মাটির বৈশিষ্ট্যই এমন যে, শুকিয়ে গেলে অতিরিক্ত শক্ত হয়ে যায়। আবার একটু পানি পেলে অতিরিক্ত কাঁদা হয়ে যায়। তাই ধানের চারার জন্য সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের।
এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় জানতে চাইলে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সাদিয়া আফরীন আরও বলেন, এসব মাটিতে অতিরিক্ত পরিমাণ জৈব সার দিতে হবে। তাতে খুব দ্রুত পরিবর্তন না হলেও কয়েক বছর পরে এসব জমিতে কৃষকরা ভালোমতো ধানের চারা উৎপাদন করে চাষাবাদ করতে পারবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার ঢাকা পোস্টকে জানান, এঁটেল মাটিতেও ধানের চারা উৎপাদন করে ধান চাষাবাদ সম্ভব। এমনকি পাশের জেলা নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলাতেও তারা বিশেষ ব্যবস্থায় চারা উৎপাদন করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বরেন্দ্র অঞ্চলের দুই উপজেলার কৃষকরা চারা উৎপাদন করে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় চারার বীজ তৈরি করতে হয় বলে, তা অনেকেই করতে চাই না। কারণ বীজের জন্য অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয়।
তিনি আরও জানান, ধানের চারা সাধারণত ২-৩ ইঞ্চি নিচে যায়। তাই বালু ও জৈব সার দিয়ে ২-৩ ইঞ্চি স্তর তৈরি করে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়। এতে আর কোন সমস্যা থাকবে না। জেলার কৃষকদের এভাবে চারা উৎপাদন করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৫১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় ৪২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে ধানের চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭২ মেট্রিন টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
সূত্র : ঢাকা পোষ্ট
Leave a Reply