সবুজ পাতার মাঝে মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে হলুদ রঙের সূর্যমুখী ফুল। সামান্য বাতাসেই দোল খাচ্ছে। এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলে দলে আসছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। পাহারা দিতে লোক রেখেও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ তুলছেন ছবি বা সেলফি, কেউবা বাগান থেকে ফুল তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। বড়দের সঙ্গে শিশুরাও মেতেছে সমান আনন্দে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের সামনে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। কালীগঞ্জ-টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের পাশে পৌরসভার তুমলিয়া এলাকায় তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনায় গড়ে তোলা হয় এ প্রদর্শনী। কৃষক সুকুমার পালমার ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে গত বছরের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বপন করেন হাইসান-৩৩ জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। প্রায় প্রতিটি গাছে এখন ফুল ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘কালীগঞ্জে কয়েকটি প্রদর্শনীসহ প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে কৃষি অফিসের প্রণোদনায় স্থানীয় কৃষকদের প্রদর্শনী খামারগুলো ফুলপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কালীগঞ্জসহ আশপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন এ সূর্যমুখী বাগানে। নানা বয়সের মানুষ কিছুটা বিনোদনের জন্য ছুটে আসছেন এখানে। পিছিয়ে নেই টিকটকাররাও।
বাগানে ঘুরতে আসা জয় বলেন, ‘সবার দেখাদেখি এখানে ঘুরতে এলাম। প্রকৃতির এক অপরূপ লীলা-খেলা চলছে এখানে। মানুষের প্রচুর ভিড়ের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতেই এখানে আসা।’
বাগানে ঘুরতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এখানে এসে ভালো লাগছে। প্রতিদিনই সবাই সূর্যমুখী বাগানে আসছে। তাই আমিও এলাম। প্রথম এলাম ২০ টাকা টিকিট নিলো। তবে ওয়েদারটা মেঘাচ্ছন্ন। একটু রোদ থাকলে আরও ভালো লাগতো।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ফেসবুকে দেখলাম বাগানে অনেকেই ছবি তুলছেন। আমিও সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। একটি ব্লগ তৈরি করার পাশাপাশি বেশ কিছু ছবি তুললাম এবং কয়েকটি টিকটকও তৈরি করলাম।’
সূর্যমুখী বাগান পাহারার দায়িত্বে থাকা এক কিশোর জানায়, সে সারাদিন বসে থাকে। কোনো দর্শনার্থী এলে তাদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে ফি নেওয়া হয়। কেউ ফুল নিতে চাইলে, নষ্ট বা ভেঙে পড়া ফুল ৫০-১০০ টাকা বিক্রি করা হয়। সারাদিন অনেক মানুষ আসে।
কৃষক সুকুমার পালমা বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। রাস্তার পাশে এবং কলেজের সামনে হওয়ায় মানুষ খুব বিরক্ত করে। ফুল চুরি করে নিয়ে যায়। তাই প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ছিলাম। তবে ২০ টাকা টিকিট মূল্যে প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে মানুষ এখন ছবি তুলতে পারছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাকে সহযোগিতা করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে যে প্রদর্শনীগুলো আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়ন করছি, এর সবগুলোতেই দর্শনার্থীদের খুব ভিড়। সূর্যমুখী ফুলের তেলের একটি বাড়তি সুবিধা আছে। তাই এটি খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী।
সূত্র :জাগোনিউজ২৪.কম
Leave a Reply