ড. জাকারিয়া আহমেদ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পাটকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের বর্ষপণ্য এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছে। পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২য় হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১ম স্থান দখল করে আছে। পাট হলো একটি প্রাকৃতিক আঁশ, যার পরিবেশগত অনেক সুবিধা আছে।
চিকিৎসায় পাটের ব্যবহার
গাছ মানুষ ও প্রাণীর পুষ্টি এবং অন্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় আশি শতাংশ তাদের ওষুধের প্রাথমিক উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক পণ্য এবং উদ্ভিদ ভিত্তিক ওষুধের ওপর নির্ভর করে এবং সমস্ত ওষুধের প্রায় পঁচিশ শতাংশ, বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচশ ভেষজ উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত। স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ, সেইসঙ্গে উচ্চমূল্য এবং কিছু রোগের চিকিৎসায় মূলধারার ওষুধের ব্যর্থতার কারণে রোগ প্রতিরোধে ঐতিহ্যগত ওষুধের ব্যবহার বেড়েছে। তাই বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য আরও স্থিতিশীল এবং কার্যকরী ওষুধ বিকাশের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান করে আসছে।
পাট পাতা ওষুধে ব্যবহারের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে পাটের ঐতিহ্যগত ব্যবহার আছে। পাটের ভোজ্য প্রজাতির পাতা প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। পাটের মূল হলো ফাইটোমেডিসিনের একটি শক্তিশালী উৎস, যা কার্যকরভাবে কিছু নির্দিষ্ট রোগের সঙ্গে যুক্ত প্রদাহ এবং পাইরেক্সিয়ার চিকিৎসায় কাজ করে। মাইক্রো এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট ছাড়াও এতে বিস্তৃত বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ আছে, যেমন- গ্লাইকোসাইড, ফেনোলিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন, স্যাপোনিন, স্টেরল, ট্রাইটারপেনয়েডস, পোর্ট হাইড্রোম এবং এফএএসি।
পদার্থগুলোতে শক্তিশালী অ্যান্টিপাইরাটিক, মূত্রবর্ধক, ব্যথানাশক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল, গ্যাস্ট্রোপ্রোটেকটিভ, অ্যান্টিনোসাইসেপটিভ, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিটিউমারের ক্রিয়াকলাপের বৈশিষ্ট্য আছে। অধিকন্তু এ পদার্থগুলো আলফা-গ্লুকোসিডেস এবং আলফা-অ্যামাইলেজ ক্রিয়াকলাপকে বাধা দেয় এবং লিভারে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস ও বিটা-অক্সিডেশন বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পাটের বীজে পাওয়া বিরল প্রজাতির এন্ডোফাইট ব্যাকটেরিয়ার (স্টাফাইলোকক্কাস হোমিনিস) জিনোম সিকোয়েন্সিং করে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন। গবেষণা অনুসারে, ওই ব্যাকটেরিয়া থেকে কমপক্ষে পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা এ অভিনব অ্যান্টিবায়োটিককে হোমিকরসিন নামে নামকরণ করেছে এবং এই অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আছে।
পাটের পাতায় ফাইটোল (ক্লোরোফিলের একটি পার্শ্ব শৃঙ্খল) নামক সক্রিয় উপাদান এবং মনো-গ্যালাক্টোসিল্ডি, অ্যাসিলগ্লিসারল শনাক্ত করা হয়েছে। ফাইটোল এবং মনো-গ্যালাক্টোসিল্ডি গ্লিসারল যথাক্রমে এপস্টাইন-বার (ইবি) ভাইরাসের প্রাথমিক অ্যান্টিজেনকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করে। পাটের জলীয় নির্যাসে ক্যানসার কেমো-প্রতিরোধক এজেন্ট আছে। তাই এটি হতে পারে একটি প্রধান যৌগগুলোর উৎস। যে টিউমার প্রতিরোধী ক্রিয়াকলাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব
পেপটিক আলসার হলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের একটি এলাকার একটি আলসার, যা অতিরিক্ত অ্যাসিড, মিউকোসাল ডিফেন্সকে ভেঙে ফেলে। পাটের পাতার একটি নির্যাস এনজিওজেনেসিস, কোষের বিস্তার এবং গ্রানুলেশন টিস্যুর পরিপক্কতা বাড়িয়ে আলসার নিরাময়কে ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের গতিশীলতা হ্রাস করে গ্যাস্ট্রিক প্রাচীরের ক্ষতস্থানের ক্ষেত্রফল এবং এডিমা বা শোথের অনুপ্রবেশ হ্রাস করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকলাপ
আমাদের দেহের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার কারণে মুক্ত (ফ্রি) র্যাডিক্যালগুলো প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ায়, মুক্ত র্যাডিক্যাল জীবিত কোষের ভেতরে এবং বাইরের বিভিন্ন জৈবিক যৌগের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়ার ফলে রোগগত পরিবর্তন ঘটায়। ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং ক্যানসারের মতো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমাতে দেখা গেছে যে, পাটের পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতার উচ্চ মাত্রা রয়েছে।
হৃদরোগ (কার্ডিওভাসকুলার) ক্রিয়াকলাপ
হৃদরোগের জন্য পাটশাক খুব উপকারী। পাট শাকে থাকা খাদ্য উপাদান মানব শরীরের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পাটের বীজ কর্কোর্টক্সিন (স্ট্রোফ্যানথিডিন) কার্ডিয়াক কার্যকলাপ প্রদর্শন করে। কার্ডিয়াক সমস্যায় ব্যবহৃত সবচেয়ে সক্রিয় ওষুধ হলো অলিটোরিসাইড এবং কর্কোরিসাইড, যা পাট থেকে পাওয়া গেছে।
অ্যান্টিডায়াবেটিক এবং বায়োঅ্যাডরবেন্ট বৈশিষ্ট্য
যেসব উদ্ভিদ প্রোটিনের সাথে মিথস্ক্রিয়া করার এবং কার্বোহাইড্রেট-হাইড্রোলাইজিং এনজাইমগুলোকে দমন করার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন পলিফেনলিক যৌগ সমৃদ্ধ, তাদের অ্যান্টিডায়াবেটিক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্ভাব্যতা ছাড়াও পাটের সম্ভাব্য অ্যান্টিডায়াবেটিক ক্রিয়া আছে।
হেপাটোবিলিয়ারি, রেনাল এবং হেমাটোলজিকাল ক্রিয়াকলাপ
ডায়াবেটিস মেলিটাস প্রতিবন্ধী লিভারের কার্যকারিতা হেপাটিক ডেল্টা-অ্যামিনোলেভিউলিনিক অ্যাসিড ডিহাইড্রেটেস কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত। পাটের পাতার নির্যাসে হেপাটোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে লিভারের প্রদাহ উপশম এবং লিভারকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে ও সেইসাথে কিছু জটিল এনজাইম সিস্টেমের কার্যকলাপের উন্নতি করে থাকে।
অ্যান্টিকনভালসেন্ট ক্রিয়াকলাপ
পাটের বীজের মিথানোলিক নির্যাস ক্যাটোকোলামাইন এবং মস্তিষ্কের অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা পরিবর্তন করে কেমো-কনভালসিভ এজেন্ট প্রভাবিত করে খিঁচুনি থেকে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করে। আর্সেনিক দ্বারা সৃষ্ট মায়োকার্ডিয়াল আঘাতের বিরুদ্ধে পাট পাতার নির্যাস একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করতে পারে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্রিয়াকলাপ
মিউকিলাজিনাস পলিস্যাকারাইডের নির্যাস সব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী কার্যকলাপের একটি অন্যতম উদাহরণ। পেট্রোলিয়াম ইথার নিষ্কাশিত পাট পাতা নানা প্রকার ব্যাকটেরিয়ার ও হামের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্রিয়া রয়েছে।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী কার্যকলাপ
পাটের একটি জলীয় নির্যাস ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের (প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম) বিরুদ্ধে ও মশার আতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রদর্শন করে।
অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ
পাট পাতা ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ। এই ভিটামিন রক্ত জমাট বাঁধতে উপকারী। এটি জন্ডিস এবং পুষ্টির দুর্বল শোষণের সম্ভাবনা কমাতেও সাহায্য করে। পাট পাতা খেলে কোলাইটিস, ক্রোনস রোগসমুহ এবং স্প্রুসহ অন্য সাধারণ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
চোখের স্বাস্থ্য
খাদ্যপুষ্টির ঘাটতির কারণে চোখের সমস্যা হতে পারে। গবেষণা দেখায় যে, ভিটামিন বি৬, ফোলেট এবং অন্যান্য ভিটামিন চোখের সমস্যা এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাট পাতায় ০.৪৯৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬ থাকে।
পায়ের সমস্যা
দেহে আয়রনের ঘাটতির কারণে অস্থির লেগ সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ডাক্তার প্রায়ই এই সিন্ড্রোম নিরাময়ের জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্টের পরামর্শ দেন। বিকল্পভাবে, পাট গাছের পাতা নিয়মিত খাওয়া বাড়ালে দেহে আয়রনের ঘাটতির পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ পাট গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন (২.৭৩ মিলিগ্রাম) রয়েছে। দেহে আয়রন গ্রহণ বৃদ্ধি পেশীর খিঁচুনিও কমিয়ে দেয়।
কোষের বৃদ্ধি
নিরাময় এবং ত্বকের পুনঃবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য ভিটামিন প্রয়োজন। বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ এপিথেলিয়াল কোষগুলোর জন্য এটির প্রয়োজন হয়। কোষের বৃদ্ধিতে এটি যে ভূমিকা পালন করে, তাই এটি ত্বকের ক্যানসারের বিরুদ্ধেও একটি দুর্দান্ত শক্তি হিসেবে কাজ করে। পাট পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা কোষের বৃদ্ধি এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত ওষুধ।
ফ্লু বা সর্দি বন্ধে
পাট পাতায় রয়েছে ভিটামিন-সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ভাইরাস এবং সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের ক্ষমতা উন্নত করে। ভিটামিন-সি ফুসফুসের সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়াসহ জটিলতার ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, তামা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। পাট পাতায় ০.২২২ মিলিগ্রাম তামা থাকে।
ক্যানসার
ক্যানসার প্রতিরোধে পাট শাক কার্যকরী। পাট পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে শরীর থেকে টক্সিন মুক্ত করে রাখে। ফলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। পাট পাতায় ভিটামিন বি৯ (৯০ মাইক্রোগ্রাম) রয়েছে। এটি একাই ক্যানসার (সার্ভিকাল ক্যানসার, কোলন এবং ফুসফুসের ক্যানসার) হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য
ক্যালসিয়াম শৈশব ও যৌবনজুড়ে দাঁতের সুরক্ষা এবং চোয়ালের হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এটি এমন মজবুত দাঁত তৈরি করতেও সাহায্য করে। যেগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া লুকানোর কোনো জায়গা পায় না। পাটের পাতায় ক্যালসিয়াম আছে, যা মাড়ির সমস্যা দূর করে।
আরও পড়ুন: পাটের আঁশ সংগ্রহের নতুন কৌশল
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত
ভিটামিন বি২ কোলাজেনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলস্বরূপ স্বাস্থ্যকর চুল এবং ত্বক হয়। তাই ত্বক এবং চুলের তারুণ্য বজায় রাখার জন্য কোলাজেন প্রয়োজন। ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতির ফলে বয়স্ক চেহারা দেখা যায়। পাট ভিটামিনসমৃদ্ধ।
হাঁপানি বা অ্যাজমা প্রতিরোধ
মানব দেহে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের প্রয়োজন হয় এবং তা হাঁপানি আক্রান্ত মানুষকে শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। পাটের পাতা ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর, যা হাঁপানি প্রতিরোধে বিকল্প ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে
হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পাটশাক দারুণ কার্যকরী। পাট শাকে পটাশিয়াম থাকার কারণে মানব দেহে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। এর কারণে দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমায়।
অনিদ্রা
অনিদ্রা দূর করতে পাট শাকের ভূমিকা অনেক। পাট শাকের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় ম্যাগনেশিয়াম থাকায় শরীরে দরকারি হরমোন জোগান দিতে সাহায্য করে। ফলে দেহের স্নায়ুতন্ত্র সচল, শান্ত রাখে এবং অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পাট শাক অতুলনীয়। পাট শাকের মধ্যে ভিটামিন এ, বি, ই, সি থাকায় রোগের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ভিটামিন-বি রক্তে থাকা শ্বেতকণা গঠন করে এবং ভিটামিন-এ ও ই চোখ, হৃৎপিণ্ডের সাথে অন্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
হাড় গঠন
হাড় গঠনে পাট শাক উপকারী। পাট শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম উপাদানগুলো হাড় গঠন করতে ও ক্ষয়রোধ করতে সহায়তা করে।
জীবন শক্তি বৃদ্ধিতে
পাট শাকের জীবনশক্তি বৃদ্ধিতে আছে অসাধারণ গুণ। এই শাকে ভরপুর মাত্রায় আয়রন থাকার জন্য রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এই পাটশাকে থাকা আয়রন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবনশক্তি বাড়িয়ে তোলে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
পাট শাকে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকে, যা খাবার হজম করতে খুব কার্যকরী এবং শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে পাটশাক বেশ কার্যকর। ফলে দেহের কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়ে যায়।
বাতজনিত ব্যথা নিবারণ
পাট শাকে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন-ই আছে, যা শরীরের গেঁটেবাত, জ্বালাযন্ত্রণা এবং আর্থরাইটিস জনিত সমস্যার সমাধানে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাম্প্রতিক বিশ্বে পরিবেশ রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবেশবান্ধব পাটের চাহিদা উত্থাপিত হয় সিন্থেটিক ফাইবারের পরিবর্তে। পাট সবজি, জিও-টেক্সটাইল, বায়োগ্যাস, বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যার প্রভাব রয়েছে পরিবেশের ওপর। বাড়তি শিশুর পথ্য হিসেবে পাট শাক খাদ্য তালিকায় রাখা যায়। পাট শাকে বেশি পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম আছে, যা শিশুর শ্রীবৃদ্ধির জন্য একটি লাভদায়ক খাদ্য হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এর অসংখ্য বায়োঅ্যাকটিভ উপাদানের উপস্থিতির কারণে এবং তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিক্যানসার, অ্যান্টি-আলসার, অ্যান্টিডিয়া প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন রোগের বিস্তৃতিরোধের কার্যকলাপের কারণে পাটকে ভবিষ্যৎ জনস্বাস্থ্যে, অ্যান্টিবায়োটিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের উৎস হিসেবে বিবেচনা যেতে পারে।
পাটের ফার্মাসিউটিক্যাল এবং নিউট্রাসিউটিক্যাল শিল্পে একটি বিকল্প উপাদান হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে। অধিকন্তু তাদের পুষ্টির মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন এবং ফোলেটের জন্য মূল্যবান উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ক্যান্সার, আলসার, ডায়াবেটিস, প্রদাহ, নিউরোইনফ্লেমেশন এবং মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে পাটের ব্যবহারিকতা মূল্যায়ন করার জন্য আরও সময় উপযোগী ও জনকল্যাণধর্মী গবেষণা প্রয়োজন। তাই এই অর্থনীতি এবং পরিবেশবান্ধব ইস্যুতে ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য প্রচুর সুযোগ আছে।
সূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম
Leave a Reply