কয়েক বছর আগেও ড্রাগন ফল সম্পর্কে মানুষের খুব একটা ধারণা ছিল না। বিদেশী ফল হিসেবেই এটি বেশি পরিচিত ছিলো।জেলায় বড় ফলের দোকানগুলোতে মাঝে মধ্যে দেখা যেত এ ফলটি। দামও ছিল নাগালের বাইরে । কিন্তু, বর্তমানে ড্রাগন চাষ অধিক লাভজনক হওয়া এ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে চাষিরা।
এখন এ ফল ছোট-বড় দোকান, কোন কোন গলির মুখে ফলের দোকানে, এমনকি ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের কাছেও মিলছে ড্রাগন ফল। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু চাষি, অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভারতের অনুমোদনহীন ড. ডন ড্রাগন টনিক ব্যবহার করে অধিক ওজনের ফল উৎপাদন করছে। যা একেবারেই স্বাদহীন। ফলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ফলে যার ফলশ্রুতিতে, ড্রাগন ফল চাষিরা মনে করছেন, অচিরেই এ ফল চাষে ধ্বস নামার আশঙ্কায় রয়েছে। অন্যান্য ফল চাষ থেকে লাভজনক বেশি হওয়ায় চাষিরা ধীরে ধীরে ঝুঁকছে ড্রাগন ফল চাষে। অন্যান্য ফল চাষের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে কৃষকরা এ ড্রাগন চাষের বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু চাষি ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কিছু চারা এনে বাংলাদেশে ফলটির চাষ শুরু করেছিল ২০১০ সালের দিকে । চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২, বারি ড্রাগন-১, পিংক ড্রাগন, ভেলভেট ড্রাগন ও ইয়োলো ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে থাকে। বাউ ড্রাগন-১-এর ভেতরের অংশ সাদা আর ওপরের অংশ লাল রঙের হয়ে থাকে। বাউ ড্রাগন-২ ও বারি ড্রাগন-১-এর বাইরে ও ভেতরে লাল। গোলাপি ড্রাগনের ভেতরে ও বাইরে গোলাপি। ভেলভেট ড্রাগনের ভেতরে ও বাইরে গাঢ় লাল হয় এবং হলুদ ড্রাগনের ভেতরে সাদা আর বাইরে হলুদ। গ্রোথ হরমোন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ভারতের অনুমোদনহীন ড. ডন ড্রাগন টনিক ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমোদিত কিছু গ্রোথ হরমোন আছে,পরিমিত মাত্রায় সেটা আমরা চাষিদের ব্যবহার করতে বলি। অনেক চাষির সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছে, এ হরমোনে ফলে আমাদের ফল মোটা হচ্ছে তাতে আমরা লাভবান হচ্ছি। তিনি আরো জানান, গত মৌসুমে জেলায় ৮৭ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছিল।
এ বছরের চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বমোট চারটি উপজেলায় ড্রাগনের চাষ হয়েছে ২৬৭ হেক্টর। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫ হেক্টর। দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ২৪১ হেক্টর। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সবচেয়ে বেশি ড্রাগনের চাষ হয় জীবননগর উপজেলায়। এ উপজেলায় ড্রাগন চাষে অনেক চাষিরা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। প্রকৃত চাষি না হওয়ায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় তারা ড্রাগন ফলে ভারতের অনুমোদনহীন ড.ডন ড্রাগন টনিক ব্যবহার করছেন। এতে ড্রাগন ফলের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে ফলের রঙ ও পরিবর্তন হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে পাকানো ড্রাগন ফলের কালার আকর্ষণীয় লাল রঙের হয়। আর টনিক ব্যবহৃত ফলের রঙ হচ্ছে লাল-সবুজ কালারের হয়। টনিক ব্যবহৃত ফলে স্বাভাবিক স্বাদ থাকছে না। ফলে ক্রেতারা এ ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম সাইফুল্লাহ রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ড্রাগন ফলে প্রচুর পটাশিয়াম, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে। এছাড়া এর বীজে ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। এটা শরীরের দুূষিত পদার্থ বের করে দিতে সহযোগিতা করে।কিন্তু‘ কিছু ড্রাগন ব্যবসায়ী তাদের নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য, সুন্দর ড্রাগন ফলে ইন্ডিয়ান নিষিদ্ধ টক্সিন নামক ফলে ইস্রে করছে। যার কারণে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এ ফল থেকে ক্ষতিগ্রস্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গহেরপুর গ্রামের ড্রাগন চাষি রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে ড্রাগন গাছে ফুল আসা শুরু হয়। অক্টোবর পর্যন্ত ফুল আসে। আর মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফল কাটা হয়। শীতের সময়ে সাধারণত ড্রাগন গাছে ফল হয় না। সাধারণত প্রতি শতক জমিতে সাতটি পিলার থাকে। প্রতি পিলার থেকে বছরে গড়ে ১২ থেকে ২০ কেজি ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়। প্রতি পিলারে চারটি করে গাছ থাকে। এছাড়া প্রতি বছর সাত-আটটি ধাপে ড্রাগন ফল বিক্রি করা যায় । প্রথমদিকে ১৫০-২০০ টাকা দাম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
শেষ দিকে প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ড্রাগন ফলে স্প্রে করা ইন্ডিয়ান নিষিদ্ধ টক্সিন নামক কেমিক্যালের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু স্বার্থন্বেষী মহল ইউটিউবে অথবা ব্যক্তিগত মোবাইলে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না। আমরা সরকার অনুমোদিত গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করি এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। এ ওষুধে কোন প্রকার ক্ষতিকারক কিছু নেই।
সূত্র :বাসস
Leave a Reply