ধনিয়া একটি মশলা জাতীয় খাবার হওয়ায় আমাদের বাংলাদেশের বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। ধনিয়া রবি ফসল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই এর চাষ করা যায়।কম সময়ের মধ্যে মসলা ফসল উৎপাদনে ধনিয়া উল্লেখযোগ্য।বর্তমান বাজারে ধনিয়ার চাহিদা প্রচুর। কারণ, ধনিয়া একটি মশলা জাতীয় খাবার বলে রান্নায় এই ধনিয়ার ব্যবহার করা হয় প্রচুর। তাই কৃষকরা এই ধনিয়া চাষ করে আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হোন। ধনিয়া এমন একটি খাবার যা রান্নার স্বাদ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ধনিয়ায় যা আছেঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩.৩ গ্রাম আমিষ, ৪.১ গ্রাম শর্করাসহ ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ‘বি২’ বা রিবোফ্লাভিন ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি’ ১৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০.১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। ধনিয়া একটি পুষ্টিকর মসলা।
মাটি ও আবহাওয়াঃ আমাদের বাংলাদেশে প্রায় সব রকমের মাটিতেই ধনের চাষ করা যায়। তবে বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি ধনে চাষের জন্য উপযোগী। ধনে আবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকতে হবে।
ধনিয়া চাষের উপযুক্ত সময়ঃ ধনিয়া চাষ বা ধনিয়ার বীজ রোপনের উপর্যুক্ত সময় হলো মধ্য ভাদ্র মাস থেকে মধ্য আশ্বিন মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসই হলো ধনিয়াা চাষের উপযোগী সময়। যদিও সারা বছর ধনিয়া চাষ করা যায। তবে এই সময় ধনিয়া চাষ করলে ধনিয়ার উৎপাদন ভালো হয়। তবে প্রায় সারা বছরই ধনিয়া চাষ করা যায়। তবে ধনিয়ার জাত ভেদে এপ্রিল-জুন মাসের তীব্র গরমে ধনিয়া চাষ করা যায় না। তাই এপ্রিল থেকে জুন মাস সময় বাদে বাকি সময় ধনিয়া চাষের উপর্যুক্ত সময়।
বীজ বপনঃ- বীজ বপনের আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এতে বীজ শোধন ও বীজের ত্বক নরম হয়ে অঙ্কুরোদ্গমের সহায়ক হয়। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে এবং সমান করার পর ১ মিটার প্রস্থের বেড তৈরি করতে হয়। বেডে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে বীজ ছিটিয়ে বুনে দিতে হয়। বেডে সারি বরাবর একটি রশি টেনে রশি ধরে হাতের আঙুল বা একটি কাঠি দিয়ে ২-৩ সেন্টিমিটার গভীর করে নালা করতে হয়। নালায় বীজ ফেলে হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। প্রতি শতকে ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। এই পরিমাণ বীজে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ধনিয়া গাছ পাওয়া যায়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ- ধনে চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টরপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ কেজি ইউরিয়া, ১০০ থেকে ২০০ কেজি টিএসপি, ৮০ থেকে ১০০ কেজি এমপি এবং ৭ থেকে ১০ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদার দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এর পর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হয়। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ৮ থেকে ১০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে এবং চারা লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পরবর্তী সময়ে মাসখানেক ধরে এ সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে ১ শতক জমিতে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। আবার বীজ সংগ্রহের জন্য গাছ রেখে দিলে এবং বীজ যখন সম্পূর্ণভাবে পাকে কিন্তু গাছ প্রায় সবুজ থাকে তখন বীজ সংগ্রহ করলে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।
Leave a Reply