গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কালিবাড়ী ইউনিয়ন একটি নিম্নজেলা ভূমি বেষ্টিত। এখানে ঘেরের আইলে ৩১০ হেক্টরে টমেটোর আবাদ হয়েছে।এখানে সব জমিই এক ফসলী। এসব জমিতে ঘের করে কৃষক বর্ষাকালে মাছ চাষ করেন। শুস্ক মৌসুমে সেখানে চাষ করা হয় বোরো ধান। আর ঘেরের উচু আইলে সারা বছর বছর শাক, সবজি ও টমেটোর আবাদ করেন তারা । এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কৃষকরা বছর ভরেই অর্থ উপার্জন করছেন। এখন তারা ঘেরের আইলে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে কাঁচা টাকা ঘরে তুলছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, কৃষক ঘেরের আইলে উৎপাদিত টমেটো সংগ্রহ করে আড়তে নিয়ে আসছেন। প্রতিটি স্থায়ী ও আস্থায়ী আড়তে টেমেটোর স্তুপ আর স্তুপ। কলাবাড়ি ইউনিয়নের নলুয়া, কালিগঞ্জ, চকপুকুরিয়া, কুমুরিয়া, রুথিয়ারপাড়, মাছাপাড়া গ্রামের ৩০টি আড়তে এ টমেটো বাছাই করে গ্রেডিং করা হচ্ছে। তারপর চালান করা হচ্ছে ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে এখানে টমেটো বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, কলাবাড়ি ইউনিয়নে ঘেরের আইলে ৩১০ হেক্টরে টমেটোর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ২৫০ মণ টমেটো ফলন দিয়েছে। সে হিসেবে কলাবাড়ি ইউনিয়নে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মণ টমেটো উৎপাদিত হবে। প্রতি কেজি টমেটো গড়ে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ইউনিয়নে ৬২ কোটি টাকার টমেটো কোনবেচা হবে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৪ হাজার ২৫০ মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে। যার গড় বাজার দর ৬৮ লাখ টাকা। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি টমেটো বিক্রি শুরু হয়। ডিসেম্বের ও জানুয়ারিতে সবেচেয়ে বেশি টমেটো বিক্রি হয়েছে। এ মাসে টমেটো বিক্রি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
কলাবাড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কৃষক পরিতোষ হালদার বলেন, ঘেরের আইলে ১ একরে টমেটোর আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন প্রতি কেজি টমেটো সাড়ে ১২ টাকা দরে বিক্রি করছি। গত ৩ মাসে গড়ে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছি। ১ একরের টমেটো থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আরো ২৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারব।
কলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজন বিশ^াস বলেন, আমার ইউনিয়ন বিল বেষ্টিত। কৃষকরা খুবই পরিশ্রিমী। তারা বিলের জমিতে ঘের করে সার বছর মাছ, ধান, শাক, সবজি, টমোটোসহ বিভিন্ন ফসল ফলান। জমির সর্বোত্তম ব্যাহার করে তারা আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলায় এ ইউনিয়নের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি খুবই চাঙ্গা ও মজবুত।
আড়তদার নিখিল বসু, পরেশ পান্ডে, শংকর হাজরা, শফিক মোল্লা, আল-আমিন মোল্লা বলেন, এ বছর কৃষক টমেটোর ভালো দাম পেয়েছে। প্রথম ৪ হাজার টাকা মণ দরে টমেটো কোনা বেচা হয়েছে। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। গড়ে এ বছর প্রতিমণ টমেটো ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আমাদের হিসেবে এ ইউনিয়নে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হয়। এ টমেটো আকারে বড়। খেতে সুস্বাদু। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় এ টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
পাইকার মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের মোঃ ইমন হোসেন রাজু বলেন, এ টমেটোর কোয়ালিটি ভালো পরিবহন করার সময় টমেটো কম নষ্ট হয়। রং ও আকার আকর্ষণীয়। খেতে দারুন। এসব কারণে কলাবাড়ি ইউনিয়নের টমেটো বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। এ টমেটো বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ থাকে। তাই এই টমোটো এখান তেকে নিয়ে বাজারজাত করে থাকি।
সূত্র :বাসস
Leave a Reply