গাছগুলো ছেয়ে গেছে আমের মুকুলে। বাতাসে মিষ্টি ঘ্রাণ। প্রকৃতিও অনুকূলে। প্রচুর মুকুল ধরেছে হাঁড়িভাঙা আমের গাছে। আমের মুকুলের আধিক্য দেখে বাম্পার ফলন আশা করছেন বাগানমালিক ও চাষিরা।
রংপুর সদরের পালিচড়া, বদরগঞ্জের শ্যামপুর, মিঠাপুকুরের খোড়াগাছসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁড়িভাঙা আমের জন্য খ্যাতি পেয়েছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমবাগানগুলো হলুদ হয়ে আছে। বসন্ত বাতাসে আমগাছে দোল খাচ্ছে মুকুল। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। সবার মুখে হাসি।
বাগানমালিকেরা জানান, ফল হিসেবে আম লাভজনক মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমবাগানের সংখ্যা। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে চাষিদের জীবন। হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
চাষিদের ভাষ্য, নিয়মিত পরিচর্যায় হাঁড়িভাঙা আমের আশানুরূপ ফলন নিয়ে চাষিদের প্রত্যাশাও বেড়েছে। স্বর্ণালি মুকুলের ডালপালাজুড়েই এখন চাষিদের স্বপ্ন। রংপুরের বিষমুক্ত সুমিষ্ট আঁশবিহীন হাঁড়িভাঙা আমের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে এই আম উৎপাদনের পরিমাণও।
সরেজমিনে রংপুর সদরের পালিচড়া, মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, পদাগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়া এলাকার গ্রামগুলোর আমগাছগুলোতে দোল খাচ্ছে মুকুল।
মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পাইকার হাট এলাকার আমচাষি আলমগীর হোসেনের প্রায় ৬ একর জমিতে আমবাগান। গত বছরও এই পরিমাণ জমিতে আমের বাগান থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আবহাওয়া খুব ভালো। পোকামাকড় যেন গাছে ভিড়তে না পারে, এ জন্য ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সব মিলিয়ে শেষমেশ যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে এ বছরও আমের বাম্পার ফলন আশা করি।’
একই এলাকার বাসিন্দা তাসকুল ইসলাম। গত বছরের মতো এ বছরও সাড়ে ৩ একর জমির ওপর আমবাগান। তিনি বলেন, হাঁড়িভাঙা আম এই এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। মানুষ কর্মমুখী হয়েছে। আমের মুকুল দেখে ফলন ভালো হওয়ায় তিনিও আশাবাদী।
হাঁড়িভাঙা আম ঘিরে চাষিদের পাশাপাশি তরুণ-যুবকেরাও উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখছেন। আমগাছে মুকুল দেখে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আগাম যোগাযোগ শুরু করেছেন আমচাষিদের সঙ্গে। এমনটাই জানালেন আমচাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ হেক্টরে, যা গত বছরের থেকে সামান্য বেশি। গত বছর হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ২০-২২ মেট্রিক টন হওয়ার আশাবাদ কৃষি বিভাগের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতি বিরূপ না হলে এবার আরও বেশি আমের ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমগাছের পরিচর্যা করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, হ্যাঁ, এই আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গত বছর প্রায় ৪২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি টাকার আম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময় এই আম বাজারে আসবে।
সূত্র :বাসস
Leave a Reply