মিষ্টি কুমড়ার বীজ এক প্রকার আরোহী লতা জাতীয় গাছ।এর ইংরেজি নাম সুইট পামকিন। দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ করা হয়, যেগুলোর মধ্যে মিষ্টিকুমড়ো অন্যতম এর পাতাগুলো বড় এবং পাতা ও কাণ্ডে সাদা কোমল লোমাবৃত। ফল বড় গোলাকার এবং সাধারণত কমলা রঙের হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা সবজি হিসেবে চাষ করা হয়। আমাদের দেশে চাষযোগ্য জমিতে ও বাড়ির আঙিনায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়। শুধু সবজি হিসেবে নয় মিষ্টি কুমড়া ও বীজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ।
মিষ্টি কুমড়ার ফুল: মিষ্টি কুমড়া এক ধরনের একবাসী জাত। অর্থাৎ একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদাভাবে উৎপন্ন হয়। উভয় ধরনের ফুল সবসময় একাকী এবং ভিন্ন পত্রকক্ষে উৎপন্ন হয়। ফুল ভোরবেলা প্রস্ফুটিত হয়। স্ত্রী ফুলের তুলনায় পুরুষ ফুল বেশি হয়। কুমড়ার জাত ও পরিবেশ ভেদে কম-বেশি হয়ে থাকে। কুমড়ার ফুল হলুদ রঙের, আকারে বৃহৎ। ফুলে ৫টি করে বৃত্তাংশ ও পাঁপড়ি থাকে। পুরুষ ফুলে তিনটি পুংকেশর থাকে। স্ত্রী ফুল থেকেই ফলের উৎপত্তি। পুরুষ ফুল সবজি হিসেবে এবং ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়।
মাটি ও আবহাওয়া : জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি কুমড়ো চাষের জন্য উত্তম। তবে চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টিকুমড়োর ভালো ফলন হয়। দেশের আবহাওয়ায় বছরের যে কোনো সময় মিষ্টিকুমড়োর রোপণ করা যায়।
জমি তৈরি ও বীজ বপন: পারিবারিক বাগানে কুমড়ার চাষ করতে হলে সুবিধাজনক স্থানে দু’একটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোন গাছের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে। বাণ্যিজিক চাষের ক্ষেত্রে প্রথম ভালোভাবে জমি ৫-১০ সেমি করে কয়েকবার ক্রস চাষ দিয়ে মই দ্বারা সমান করতে হবে। তারপর ১৫-২০ সেমি উঁচু এবং ২.৫ মি বাই ৮মি প্লট তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি প্লটে ২ মিটার পর পর ৪৫ বাই ৪৫ বাই ৪০ সেমি আকারের পিট তাতে বীজ বপন করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিটি প্লটের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য সরু নালী এবং জমির চারপাশে অপেক্ষাকৃত মোটা নালী তৈরি করে রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করা যায়।
চারা উৎপাদন : পলিব্যাগে মিষ্টিকুমড়োর চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার সেন্টিমিটার আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে
অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে
প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে এবং তা পলিব্যাগে ভরতে হবে
প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বুনতে হবে এবং বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে
বীজ বপনের সময়কালঃ শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফ্রেরুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বপন করা উত্তম।
সার প্রয়োগ: ভালো ফলন পেতে মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে জমিতে বিভিন্ন সার ব্যবহার করা দরকার। এক্ষেত্রে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে প্রতিটি পিটে সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বীজ বপনের প্রায় ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি প্লটে ১০-১৫ কেজি গোবর সার এবং প্রতিটি পিটে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমপি, ৪০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে পিট তৈরি করলে ভালো হয়। বীজ অঙ্কুরিত হলে ১৫-২০ দিন পর প্রতিটি পিটে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যা : গাছে ফুল আসার সময় কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না, কারণ ওই সময় বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়। যেসব মিষ্টিকুমড়ো ক্ষেতে কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেশি থাকে, সেসব ক্ষেতে কুমড়োর সংখ্যা বাড়ে।
মাটিতে রস না থাকলে সেচ দেওয়া উচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রথম অবস্থায় সাত থেকে ১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়া ভালো। গাছ চারদিকে ছড়িয়ে গেলে তখন সেচ দেওয়া বা নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
ফসল সংগ্রহ : বীজ বপণের দু’মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাস ব্যাপি ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোন পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয় ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল পাড়া যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।
Leave a Reply