শহরে বা গ্রামে-গঞ্জে নানা কাজে ব্যবহৃত হয় বাঁশ। তবে এই বাঁশ রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে এলাকার মানুষকে। যার নাম ‘লাকি ব্যাম্বু’ বা ‘ভাগ্যবান বাঁশ’। কোনো কোনো দেশে একে ফ্রেন্ডশিপ বাঁশ, কোঁকড়া বাঁশ, চাইনিজ ওয়াটার ব্যাম্বু বা দেবীর দয়ার গাছসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এ বাঁশ বাড়িতে রাখাকে শুভ বলে মনে করেন অনেকেই। তাই ঘর সাজাতে ব্যবহৃত হয়। উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই বাঁশ।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি শান্তিরামের হাফিজ এবং হাসিবুল মিলে চাষ করেছেন লাকি ব্যাম্বু। লাকি ব্যাম্বু দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের টব এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে কয়েক বছরে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন দুই ভাই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, লাকি ব্যাম্বু উদ্ভিদের রং গাঢ় সবুজ বলে তা বাড়ির অন্তঃপুরে রাখলে ঘরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সবুজের দিকে তাকালে চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে। উদ্ভিদটিকে বাঁশ গাছ বলা হলেও এ গাছ আসলে বাঁশ প্রজাতির নয়, এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলের লিলি প্রজাতির গাছ।
সরেজমিনে জানা গেছে, চার খণ্ডে বিভক্ত তিন বিঘা জমিতে ৩টি ভিন্ন রঙের লাকি ব্যাম্বু চাষ করেছেন হাফিজ ও হাসিবুল। কোনো অংশে চাষ করা হয়েছে সবুজ রঙের, কোনো অংশে আবার সবুজের মাঝে সাদা ডোরাকাটা, কোনো অংশে লাগানো হয়েছে গাঢ় সবুজ রঙের বাঁশ। সূর্যের আলোতে উৎপাদন হয় না বলে আধো আলো-ছায়া দেওয়ার জন্য জমির ওপর টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে সবুজ রঙের নেট জাতীয় কাপড়।
বাগানে ঢুকতেই চোখ যেন আটকে যায় সবুজে ভরা লাকি ব্যাম্বু উদ্ভিদের নজরকাড়া সৌন্দর্যে। টবে রাখার মতো উপযোগী করে সাজানো একেকটি ডিজাইনের দাম ৭০০-১০০০ টাকা। কখনোবা তারও বেশি। সে হিসেবে প্রতিবার রপ্তানিতে হাফিজের আয় হয় ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা।
অভিজাত বাসা-বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে অন্যতম পছন্দের তালিকায় লাকি ব্যাম্বু। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এটি। ২০১৪ সালে প্রথমে পাঁচ শতক জমিতে চাষ করেন দুই ভাই। এতেই ঘুরতে থাকে তাদের ভাগ্যের চাকা। ৩ বিঘা জমিতে ৩টি প্লটে শোভা পাচ্ছে ডোরাকাটা সাদা, হলুদ, সবুজ ও গাঢ় সবুজ লাকি ব্যাম্বু। তাদের বাহারি ডিজাইনের টব এখন ওমান, কাতার, দুবাই ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে যাচ্ছে। প্রচুর অক্সিজেন পাওয়া যায় বলে মরুভূমির দেশে এর কদর বেশি।
তাদের চাষ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। দুই ভাইয়ের বাগান পরিচর্যা করে সংসার চালাচ্ছেন শ্রমিকেরা। এলাকাবাসী জানান, এ বাঁশ দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র তৈরি হয়। দুই ভাইয়ের মতো অন্যরা এভাবে উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্ব দূর করবে, এমন আশা তাদের।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বাঁশের তৈরি বিভিন্ন রকমের গৃহসজ্জার পণ্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারছি। এটি খুবই ভালো। দেশের বেকার তরুণরা চাকরির পেছনে এত না দৌড়ে উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন।’
তরুণ উদ্যোক্তা হাফিজ বলেন, ‘প্রথমে অনেকটাই হতাশ হয়েছিলাম। এসব পণ্য তৈরি করে কোথায় বিক্রি করবো? তবে গৃহসজ্জার জন্য তৈরি এসব পণ্য দেশেই নয়; বিদেশেও যাচ্ছে। আয়ও হচ্ছে। নিজেরা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছি। আমার মতো অন্যরা উদ্যোক্তা হয়ে যেন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন উদ্যোক্তাদের পাশে কৃষি বিভাগ সব সময় আছে। চাষাবাদ বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। লাকি ব্যাম্বু চাষ করলে প্রতি বিঘায় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।’
Leave a Reply