1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
সুগন্ধি মরিচ চাষে সুনীলের সমৃদ্ধি
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

সুগন্ধি মরিচ চাষে সুনীলের সমৃদ্ধি

  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০১ পড়া হয়েছে

সুগন্ধি মরিচ বিক্রি করে বছরে ছয় লাখ টাকা লাভ! কিন্তু কীভাবে সম্ভব? সত্যতা যাচাই করতে সুনীল চন্দ্র মণ্ডলের মরিচবাগানে হাজির হয়ে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। ছোট ছোট বোম্বাই মরিচ বাগানে হাজারো গাছের শাখায় ঝুলছে সবুজ মরিচ।

সুনীলের মরিচের লাভের কথা শুনে ফোনে যখন প্রথম আলাপ হয়, তখন ‘অবিশ্বাস্য লাগছে’ বলতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, ‘আসেন, নিজের চোখে দেখে যান। এটা কীভাবে সম্ভব করেছি, যাচাই করে যান।’

সুনীলের কথা অনুযায়ী, এই বাগান দেখতে যাওয়ায় সেই উত্তেজনা যেন উপচে পড়ছিল তাঁর। খেতের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সুনীল গাছ থেকে একটি মরিচ ছিঁড়ে দুই আঙুলের ফাঁকে ফেলে চাপ দিয়ে ভেঙে এনে নাকের কাছে ধরেন। বলেন, ‘এই নেন ঘ্রাণ শোঁকেন।’ সুগন্ধে মনজুড়ানো অবস্থা দেখে, সুনীলের উত্তেজনা যেন আরেক ধাপ বেড়ে গেল। বললেন, ‘এইবার কি আপনের বিশ্বাস হইছে?’ মাথা নাড়াতে দেখে তাঁর উত্তেজনা এবার কিছু কমতে থাকে। তখন একফালি হেসে বললেন, ‘অনেক কষ্ট করছি, তারপর এই সাফল্য।’

সুনীলের চাষ করা এই জাতকে স্থানীয়ভাবে ঘৃতকুমারী মরিচ বলে। দারুণ সুগন্ধি হওয়ায় এই মরিচের চাহিদাও খুব বেশি। ঘ্রাণ ছাড়া মরিচের চেয়ে দামও দ্বিগুণ। শিঙাড়া, চপ, পেঁয়াজুসহ মুখরোচক খাবারে এই মরিচের ব্যবহার দেখা যায়। এই মরিচের ঝাল আর সুগন্ধ এসব খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। আবার শখ করে বাজারে অনেক ক্রেতাও খোঁজেন এই সুগন্ধি জাতের বোম্বাই মরিচ।
বরগুনার সদর উপজেলার হেউলিবুনিয়া গ্রামটি শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। সেখানেই সুনীলের এই মরিচের খেত। সুনীল মণ্ডলেরা চার ভাই। তিনি তৃতীয়। বড় দুই ভাই মারা গেছেন। ছোট ভাই পানের বরজ করেন। বাবা সূর্যকান্ত মণ্ডল ছিলেন হেউলিবুনিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় বাঁশবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর সুনীলের পড়াশোনা আর এগোয়নি। পরিবার বড় হওয়ায় বাবার কৃষিকাজে সংসারে সচ্ছলতা কমে আসছিল। সময় বদলে যাওয়ায় সুনীল ভেবেচিন্তে দেখেন, শুধু ধান চাষে আর জীবন চলবে না। বিকল্প কিছু একটা করতে হবে। যে পড়াশোনা, তাতে চাকরিও জুটবে না। তাহলে কী করবেন? ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন, বাবার জমিতে কলাবাগান আর গাছের চারার নার্সারি করবেন। ১৬ শতক জমিতে তা শুরু করলেন। কিন্তু তাতে খুব একটা বড় লাভের মুখ দেখলেন না। হতাশ হলেন। এবার জমানো সামান্য অর্থ দিয়ে শুরু করলেন কাঠের ব্যবসা। গ্রাম থেকে গাছ কিনে তা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির মোকামে বিক্রি করতেন। তখন বিয়েটাও সেরে ফেলেন। প্রায় ১২ বছর ধরে এই কাঠের ব্যবসা করে আর্থিক ভিত্তি মোটামুটি শক্ত করেন। এরপর হেউলিবুনিয়া গ্রামে আবার শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। এই গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক একর জমি বছরে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে এই নার্সারি গড়ে তোলেন। সেখানে বছর দশেক আগে নার্সারির পাশাপাশি শুরু করেন সুগন্ধি মরিচের চাষ। মরিচ চাষে ভালো লাভ হওয়ায় নার্সারি শেষে পুরোপুরি মরিচ চাষেই ঝুঁকে পড়েন তিনি। এখন কেবল মরিচ চারা ছাড়া আর কোনো চারা করেন না নার্সারিতে। প্রতিবছর হাজার দশেক মরিচের চারা করেন। এর অর্ধেক নিজের খেতে রোপণ করেন, বাকিটা বিক্রি করেন। প্রতিটি চারা বিক্রি করেন ৫০ টাকা করে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা আসেন তাঁর চারা কিনতে।
মরিচ চাষ করেন যেভাবে

সুনীল তাঁর নিজের বাগানে নিজের নার্সারিতে করা মরিচের চারাই রোপণ করেন। বাড়তি চারা বিক্রি করে দেন। শ্রাবণের শেষ দিকে খেতে চারা রোপণ করেন। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। সার প্রয়োগ, আগাছা নিড়ানি, পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ, কত কী! গাছের গোড়ার মাটি যাতে জমাট বেঁধে না যায়, সে জন্য মাঝেমধ্যে তা খুঁচিয়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। তবে বর্ষায় সেচ লাগে না। বর্ষার মধ্যেই গাছগুলো ঘন-গাঢ় ডালপালা-পাতায় সবুজ হয়ে ওঠে, ফুল ধরে শাখায় শাখায়। আশ্বিনে শুরু হয় মরিচের ফলন। শাখাগুলো ভরে ওঠে সবুজ মরিচে মরিচে। এরপর প্রতিদিনই মরিচ তোলেন, বিক্রি করেন। বরগুনা থেকে পাইকার এসে খেত থেকেই প্রতিদিন মরিচ নিয়ে যান। মরিচ তোলেন, আবার ফুল আসে। এভাবে মরিচের ফলন চলতে থাকে বৈশাখের শেষ অবধি।
সুনীলের খেতে পাঁচ হাজার চারা আছে। এর থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেন। গত মৌসুমে তিন লাখের ওপরে মরিচ ধরেছে। ছোট, মাঝারি, বড়—তিন ধরনের মরিচ বিক্রি করেন শতক হিসেবে। প্রতি শতক মরিচ পাইকারি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। গত মৌসুমে সব ব্যয় মিটিয়ে সুনীল ছয় লাখ টাকা মরিচ বিক্রি করে লাভ করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় লাভের পরিমাণ আট লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশা।

সুনীল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘পরিবারকে আমি পরিশ্রম, বুদ্ধি আর নিজের কৌশলে টেনে এখানে এনেছি। পরিবার নিয়ে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছি, সুখে আছি।’ কৃষিকাজকে একসময় সমাজে খাটো করে দেখা হতো উল্লেখ করে সুনীল বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, কৃষিই আমাদের মৌলিক পেশা। এতে নিজে বাঁচা যায়, অন্যকেও বাঁচানো যায়। দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান রাখলে কৃষকেরাই রাখেন।’
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) এস এম বদরুল আলম বলেন, জলবায়ুর সংকটে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্র মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়েছে। অসহনীয় লবণাক্ততা মাটি ও পানিকে ক্রমেই ব্যবহার অনুপযোগী করে তুলছে। এখন চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তন, ফসলের বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। উপকূলে কৃষক সুনীলের ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তায় যে কৌশল অবলম্বন করে সফলতা পেয়েছেন, সেটা সারা দেশের জন্য অনুসরণীয় এক গল্প হতে পারে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD