1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
ধান চাষের পদ্ধতি - Rite Krishi Shop
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

ধান চাষের পদ্ধতি

  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৮৯ পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের জলবায়ু ধান চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এটি এদেশের একটি প্রাচীনতম ফসল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে চতুর্থ বৃহত্তম। ধানই এদেশের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশের অর্থনীতি মূলত: ধান উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। নতুন নতুন বাড়ী-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এর মূল কারণ। এর উপর রয়েছে খরা, বন্যা, লবণাক্ততাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অপর দিকে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষাবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদার যোগান দেওয়া হচ্ছে। ধানের ইংরেজি নাম Rice এবং বৈজ্ঞানিক নাম Oryza sativa।

বীজ, বীজতলা ও চারা

উফশী ধানের ফলন উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। তাই জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সব কাজ ধারাবাহিকভাবে বিচক্ষণতার সাথে করতে হবে। নিয়মের হেরফের অথবা অনুমোদিত পদ্ধাত ঠিকমতো অনুসরণ না করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং আশানুরুপ ফলন থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

জাত নির্বাচন

জমি, মৌসুম, পরিবেশ ও শস্যক্রম বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা উচিত। সে অনুযায়ী তালিকা ১ থেকে মৌসুমভেদে উপযুক্ত ধানের জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।
বীজ বাছাই
বপনের জন্য রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা। আর রোগাক্রান্ত চিটা থেকে বীজতলায় সহজেই রোগ ছড়ায়। তাই মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের লক্ষ্যে ভালভাবে বীজ বাছাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বীজ বাছাইয়ের জন্য প্রায় ৪০ লিটার পরিষ্কার পানিতে দেড় কেজি ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিন। এবার ৪০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন। ভারী, পুষ্ট, সুস্থ্য ও সবল বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপরিপুষ্ট, হালকা, রোগ বা ভাঙ্গা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো পৃথক করে নিন। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিস্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। ইউরিয়া মিশানো পানি সার হিসেবে বীজতলায় ব্যবহার করা যায়। কুলা দিয়ে ঝেড়ে বীজ বাছাই পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এতে চিটা দূর হলেও অপরিপুষ্ট বীজ দূরীভুত হয় না।

বীজতলা তৈরি

বীজতলা তৈরির আগে তালিকা ২ দেখে জেনে নিতে হবে কখন কোন জাতের ধানের বীজ বীজতলায় বপন করতে হবে। চারটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা যায়। এগুলো হচ্ছে শুকনো, কাদাময়, ভাসমান ও ডাপোগ বীজতলা।
শুকনো বীজতলা
উপযুক্ত আর্দ্রতায় ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটিকে একেবারে ঝুরঝুরে করার পর জমি সমান করে শুকনো বীজতলা তৈরি করা যায়। এবার চারাগাছের পরবর্তী পরিচর্যা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা তৈরি হবে। বেডের উপরি ভাগের মাটি ভালোভাবে সমান করার পর শুকনো বীজ সমানভাবে ছিটিয়ে দিন। এরপর উপরের মাটি এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যেন বীজগুলো ২.৫-৪.০ সেন্টিমিটার (১.০-১.৫ ইঞ্চি) মাটির নিচে চলে যায়। এ কাজকে সহজ করতে ধুলা মাটির আস-রণ দেওয়া যায়। বেডের মাটিতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা নিশ্চিত করার জন্য নালা ভর্তি করে সেচ দেয়া উচিত।

কাদাময় বীজতলা- দোঁআশ ও এটেল মাটি এ বীজতলায় জন্য ভাল। আরেকটি কথা, বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পচা গোবর বা আবর্জনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দু-তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিন এবং পানি ভালভাবে আটকে রাখুন। আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে গেল আবার চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। বেডের দুই পাশের মাটি দিয়ে বেড তৈরি করা যায়।এরপর বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। কাদা বেশি হলে বীজ মাটিতে ডুবে যাবে এবং তাতে ভালভাবে বীজ গজাবে না। এ অবস্থায় বেড তৈরির পৌনে এক ঘন্টা পর বীজ বোনা দরকার। উল্লেখ্য যে, বীজতলা তৈরির জন্য দুই বেডের মাঝে যে নালা তৈরি হলো তা খুবই প্রয়োজন। এ নালা যেমন সেচের কাজে লাগবে তেমনি প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন ও বীজতলার পরিচর্যা করা সহজ হয়। ভাসমান বীজতলা- বন্যা কবলিত এলাকায় যদি বীজতলা করার মতো উঁচু জায়গা না থাকে বা বন্যাপানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রযোজনীয় সময় না পাওয়া যায় তাহলে বন্যার পানি, পুকুর, ডোবা বা খালের পানির উপর বাঁশের চাটাইয়ের মাচা বা কলাগাছের ভেলা করে তার উপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলার মতো ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যায়। বন্যার পানিতে যেন ভেসে না যায় সেজন্য বীজতলা দড়ি বা তার দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা দরকার। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলার পানি সেচের দরকার হয় না। ডাপোগ বীজতলা- বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ডাপোগ বীজতলা করা যায়। বাড়ীর উঠান, পাকা বারান্দা বা যে কোন শুকনো জায়গায় চারদিকে মাটি, কাঠ, ইট বা কলাগাছের বাকল দিয়ে চৌকোণা করে নিতে হবে। এবার কলাপাতা বা পলিথিন বিছিয়ে তার উপর ঘন করে অঙ্কুরিত বীজ বুনতে হবে। এ বীজতলার নিচে আচ্ছাদন থাকায় চারাগাছ মাটি থেকে কোনররূপ খাদ্য বা পানি পায় না বলে ৫-৬ ঘন্টা পর পর ভিজিয়ে দিতে হবে এবং দু’সপ্তাহের মধ্যেই চারা তুলে নিয়ে রোপণ করা দরকার। অন্যথায় চারাগাছ খাদ্যের অভাবে মারা যেতে পারে।

বীজ জাগ দেওয়া

উপরে বর্ণিত বীজ বাছাই পদ্ধতিতে বাছাইকৃত বীজ কাপড় বা চটের ব্যাগে ভরে ঢিলা করে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ২৪ ঘন্টা। এরপর বীজের পোটলা পানি থেকে তুলে ইট বা কাঠের উপর ঘন্টাখানেক রেখে দিন পানি ঝড়ে যাওয়ার জন্য। এবার বাঁশের টুকরি বা ড্রামে ২/৩ পরত শুকনো খড় বিছিয়ে তার উপর বীজের পোটলা রাখুন এবং আবারও ৩/৪ পরত শুকনো খড় দিয়ে ভালভাবে চেপে তার উপর ইট বা কাঠ অথবা যেকোন ভারি জিনিস দিয়ে চাপা দিন। এভাবে জাগ দিলে ৪৮ ঘন্টা বা ২ দিনেই ভাল বীজের অঙ্কুর বের এবং কাদাময় বীজতলায় বপনের উপযুক্ত হবে। বীজতলায় বপন
সতেজ ও সবল চারা আমাদের প্রধান কাম্য। তাই বাছাইকৃত বীজ ওজন করে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বোনা দরকার। এরূপ ১ বর্গমিটার বীজতলার চারা দিয়ে ২৫-৩০বর্গমিটার জমি রোপণ করা যাবে। উল্লেখ্য যে, ডাপোগ বীজতলার জন্য প্রতি বর্গমিটারে ২.৫-৩.০ কেজি বীজ বুনতে হবে এবং শুকনো বীজতলার জন্য বীজ জাগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভেজা বীজতলায় বীজ বেডের উপর থাকে বলে পাখিদের নজরে পড়ে। তাই বপনের সময় থেকে ৪/৫ দিন পর্যন- পাহারা দিতে হবে। তালিকা ২ এ জাত ভিত্তিক বীজ বপনের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

বীজতলার পরিচর্যা

বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখা দরকার। বীজ গজানোর ৫-৬ দিন পর বেডের উপর ২-৩ সেন্টিমিটার পানি রাখলে আগাছা ও পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড়-বাড়তি ব্যহত হয়। এ কারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডাজনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায় এবং চারার বাড় বাড়তি বৃদ্ধি পায়। বীজতলায় আগাছা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে তা দমন করার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বীজতলায় চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি-প্রযোগ করলেই চলে। ইউরিয়া প্রয়োগের পর চারা সবুজ না হলে গন্ধকের অভাব হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তখন প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করা দরকার। ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগের পর বীজতলার পানি নিষ্কাশন করা উচিত নয় চারা উঠানো চারা উঠানোর আগে বীজতলায় বেশি করে পানি দিতে হবে যাতে বেডের মাটি ভিজে একেবারে নরম হয়ে যায়। চারা উঠাতে এমন সাবধানতা নিতে হবে যেন চারা গাছের কান্ড মুচড়ে বা ভেঙ্গে না যায়। উঠানো চারার মাটি কাঠ বা হাতে আছাড় না দিয়ে আসে- আসে- পানিতে নাড়াচাড়া দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, চারাগাছের শিকড় ছিঁড়ে গেলেও রোপণের পর চারার বাড়-বাড়তির কোনররূপ অসুবিধা হয় না কিন’ কান্ড মুচড়ে গেলে চারাগাছের বেশ ক্ষতি হয়। এ জন্য চারা উঠানোর পর ঐ চারার পাতা দিয়ে বান্ডিল বাঁধাও উচিত নয়। শুকনো খড় ভিজিয়ে নিয়ে বান্ডিল বাঁধতে হবে।

চারা বহন বীজতলা থেকে রোপণ ক্ষেতে চারা বহন করার সময় পাতা ও কান্ড মোড়ানো রোধ করতে হবে। এজন্য ঝুড়ি বা টুকরিতে এক সারি করে সাজিয়ে ভারের সাহায্যে চারা বহন করা উচিত। বস্তাবন্দী করে ধানের চারা বহন করা উচিত নয়।

রোপণের জন্য জমি তৈরি জমিতে হেক্টরপ্রতি ৩-৫ টন পরিমাণ জৈব সার ভালভাবে ছিটিয়ে দিন। এখন ৫-১০ সেন্টিমিটার পানি দিয়ে দুটি চাষ আড়াআড়িভাবে দিয়ে ৭-৮ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এবার ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর করে আড়াআড়িভাবে দুটি চাষ ও দুটি মই দিয়ে ৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর দিতে হবে শেষ চাষ। এ চাষের আগেই নাইট্রোজেন (১ম কিসি-), পটাশ, ফসফেট এবং জিপসাম সার ছিটিয়ে চাষ শুরু করতে হবে। সারের পরিমাণ সার ব্যবস’াপনা অংশ থেকে দেখে নিতে হবে। জমির মাটি ভেদে শেষ চাষ এক বা দুবার হতে পারে। মই দিতে হবে ২-৩ বার জমি সমান হয় এবং সমস- জমিতে কই গভীরতায় পানি থাকে উওমরূপে কাদা করে তৈরি জমিতে পানির অপচয় কম হয়, নাইট্রোজেন সারের কার্যকারিতা বাড়ে, অনেক আগাছা দমন হয় এবং অতি সহজে চারা রোপণ করা যায়।

চারা রোপণ চারার বয়স- ভাল ফলন পেতে হলে উপযুক্ত বয়সের চারা রোপণ করা জরুরি। তালিকা ২ তে জাত ও মৌসুম ভেদে চারার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণভাবে আউশে ২০-২৫ দিন, রোপা আমনে ২৫-৩০ দিন এবং বোরাতে ৩৫-৪৫ দিন হওয়া উচিত। রোপণের নিয়ম- রোপণের সময় জমিতে ছিপছিপে পনি থাকলে চলে। প্রতি গুছিতে ২-৩ টি চারা রোপণ করা ভাল। মাটির ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরতায় চারা রোপণ করা উত্তম। সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ করলে চারার বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং কুশির সংখ্যা বেশি হয়। চারা রোপণের দূরত্ব- সারিবদ্ধ ভাবে চারা রোপণ করতে হবে।

সারি থেকে সারির দূরত্ব এবং প্রতি সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে (তালিকা ২)। এ বিষয়টি অতীত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুছি থাকলে নির্দিষ্ট ফলন হবে। আবার সারিবদ্ধ চারা রোপণ করলে নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহার করা যায় তাতে খরচ কমবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারার দূরত্ব সঠিক হতে হবে। উপরন’ সঠিক দূরত্ব চারা রোপণ হলে প্রত্যেক গাছ সমানভাবে আলো, বাতাস ও সার গ্রহণের সুবিধা পাবে আর তা ভাল ফলনে সহায়তা দেবে।

বিকল্প চারা- বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে ফসল নষ্ট হলে যেসব জায়গায় ধান নষ্ট হয়নি সেখান থেকে কুশি ভেঙ্গে নিয়ে অন্যত্র রোপণ করা যায়। এতে ফসলের কোন ঘাটতি দেখা যায় না। প্রতিটি গোছা থেকে ২-৩ টি কুশি রেখে বাকিগুলো আলাদা করে অন্য জায়গায় প্রতি গোছায় দুটি করে রোপণ করলেও ভাল ফলন পাওয়া যায়।

জাতের বৈশিষ্ঠ্য

জাতের বৈশিষ্ঠ্য অধিক ফলন ও লাভের জন্য এলাকা ভিত্তিক চাষ উপযোগী সঠিক জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাল বংশ ও মা ছাড়া যেমন ভাল সমন্বিত আশা করা যায় না তেমনি ভাল জাতের ভাল বীজ ছাড়া উত্তম ফসল পাওয়া যায় না। নানা জাতের বীজের মধ্যে তাই সঠিক জাতটি নির্বাচন করে চাষ করা একজন কৃষকের প্রাথমিক দায়িত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশে হাইব্রিড, উফশী ও নানা ধরনের আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হচ্ছে। তবে কৃষকদের কাছে সব জাতের গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে উদ্ভাবিত এ পর্যন্ত ৪৬টি উফশী ওএকটি হাইব্রিড জাতকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিনা থেকে উদ্ভাবিত জাতসমূহ যেমন বিনাশাইল, বিনাধান ৫, বিনাধান ৬ ও বিনাধান ৭ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত দু’টি জাত বিএইউ ৬৩ (ভরসা) এবং বিএ ইউ ২ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীচে এ দেশে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হল (তালিকা ১ ও ২)।

বিআর ১ : বোরো ও আউশ মৌসুমে আবাদযোগ্য এ ধানের জনপ্রিয় নাম চান্দিনা । কোন কোন অঞ্চলে এ ধান ৫৩২ আবার কোথাও কেবল ৭৬ নামে পরিচিত । চান্দিনা একটি আগাম জাত ।

বিআর ২ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম মালা । এ ধানের মুড়ি খুব ভাল হয়। মালা বোরো এবং রোপা আউশের একটি জাত।

বিআর ৩ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম বিপ্লব। এটি নাবী জাত হলেও বোরো মৌসুমে ফলনের জন্য সুখ্যাত। জাত রোপা আউস এবং রোপা আমন মৌসুমেও ভাল ফলন দেয়।

বিআর ৪ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম ব্রিশাইল। এটি একটি আলোক-সংবেদনশীল জাত। তাই কেবল রোপা আমন মৌসুমে চাষাবাদ করার জন্য উপযোগী। এ ধানের বীজ বপনের সবচেয়ে ভাল সময় হলো আষাঢ় মাস। এ সময় বীজ বপন করলে শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে চারা রোপণ করা যায়। কার্তিকের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহে ফুল ফোটে। অগ্রহায়ণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ধান পাকে।

বিআর ৫ : আমন মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয়তা নাম দুলাভোগ। এর চালের কালিজিরা চালের মতো সুগন্ধ আছে বলে পোলাও এবং পায়েশ তৈরির জন্য খুবই উপোযোগী। এটি আলোক- সংবেদনশীল, তাই এর চাষাবাদ রোপা আমন মৌসুমের জন্য নির্ধারিত।

বিআর ৬ : বোরো ও আউশ মৌসুমের জাত। ব্রি এ ধানটি ইরি থেকে সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় বিআর ৬ নামে অনুমোদন পায়। এটি একটি আগাম জাত।

বিআর ৭ : ঝড়-ঝঞ্ঝা কম হয় এমন অঞ্চলে এ ধান রোপা আউশ ও বোরো মৌসুমের জন্য উপযোগী। কারণ ধান বেশি পেকে গেলে ঝড়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ ধান পাকার সাথে সাথে কর্তন করতে হবে। এর চালের আকার প্রায় বাসমতির মতো, তবে এতে সুগন্ধি নেই।

বিআর ৮ : এ জাতের জনপ্রিয় নাম আশা। বোরো এবং আউশ মৌসুমের এ জাত ধান শীষের সাথে শক্তভাব লেগে থাকে । তাই ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং শিলা বৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য এ ধান বিশেষ উপযোগী।

বিআর ৯ : বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষের উপযোগী। বিআর ৯ এর জনপ্রিয় নাম সুফলা। এ জাতে ধান শীষের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে তবে আশা ধানের চেয়ে মজবুতি কিছু কম। এ জাত শিলাবৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য খুবই উপযোগী।

বিআর ১০: এ ধানের জনপ্রিয় নাম প্রগতি। এজাতটি সহজে চেনা যায। কারণ ফুল ফোটার সময় শীষগুলো ডিগপাতার নিচে থাকে এবং ডিগপাতার শেষ প্রান- হঠাৎ করেই সুচালো। প্রগতিকে রোপা আমনের নাবী জাতের তালিকায় ফেলা যায়। জাতটিতে আলোক-সংবেদনশীলতা আছে। এ কারণে রোপণের জন্য ৪০-৫০ দিনের চারা ব্যবহার করা যায়। তখন চারা বেশ লম্বা হয় এবং হাঁটু পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। এ সব সুবিধার জন্য খুলনার লবণাক্ত এলাকায় রোপা আমন মৌসুমে জাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ জাতের লবণাক্ত সহনশীলতা নেই, কিন’ রোপা আমনে লবণাক্ত অঞ্চলে ক্ষেতে ২০-৩০ সেমি: গভীর পানি থাকায় লবণাক্ত মাত্রা ধানের ক্ষতিকারক পর্যায় (৪ডিএস/মিটার) এর নিচে থাকে। স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতার জন্য এ জাত জ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কর্তন করা যায়। ফলে ঐ জমিতে সময় মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করা যায়।

বিআর ১১ : এধানের জনপ্রিয় নাম মুক্তা। এ ধানের ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপরে থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। আমন মৌসুমের এ জাতটি সারা দেশে জনপ্রিয়। মুক্তা ধান স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতাবিশিষ্ট। স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতার জন্য এ জাত জ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাটা যায়; ফলে ঐ জমিতে সময়মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করা যায়।

বিআর ১২ : বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম ময়না। এ ধানের গাছের নিচের অংশে বেগুনী রঙ দেখে জাতটি সহজে চেনা যায়। এ জাতটি দেশের যে সকল অঞ্চলে আগাম রোপা আউশ হয় ঐ সব এলাকার জন্য খুবই ভাল জাত।

বিআর ১৪ : এর জনপ্রিয় নাম গাজী। বোরো ও আউশ মৌসুমের এ জাত ছড়া বের হবার পর ডিগপাতা কিছুটা হেলে যায়; ফলে শীষ উপরে দেখা যায় এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছড়ার উপরি ভাগের ধানে হেলে শুঙ আছে। ধানের গাছ বেশ উঁচু এবং খুব মজবুত, তাই ধান পাকার সময় মাঠ কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় না। এ জন্যে দেশের বিল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে এটি খুবই জনপ্রিয়।

বিআর ১৫ : বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিআর ১৫ নামে অনুমোদন লাভ করে। এর জনপ্রিয় নাম মোহিনী । এ জাতের চাল প্রায় স্থানীয় শানীয় ধানের মতো, কিন’ এটি নাবী জাত। বিআর ১৬ : বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম শাহীবালাম। এ ধানের চাল পুরানো আমলের বালাম সমমানের এবং বর্তমানে মুড়ি তৈরি জন্য খ্যাতি লাভ করেছে।

বিআর ১৭ : ব্রি এ জাতটিকে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য এ জাতটি অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম হাসি । এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড শক্ত। ফুল ফোটার সময় এ ধানের শীষগুলো ডিগপাতার উপরে থাকে বলে সহজেই দৃষ্টি অকর্ষণ করে এবং জাতটির জীবনকাল মাধ্যম মেয়াদী।

বিআর ১৮ : ব্রি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করে। বোরো ও মৌসুমে এ জাতটি বিআর ১৮ নামে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম শাহজালাল। এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড মজবুত এবং নাবী।

বিআর ১৯ : জাতটি ধান পরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রি-তে আসে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এটি হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা হয। বোরো মৌসুমের এ জাতটি বিআর ১৯ নামে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম মঙ্গল। এর ডিগপাতা ছোট এবং কান্ডের সাথে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ফুল ফোটার সময় শীষ উপরে থাকে এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ জাতের গাছ বেশ উঁচু এবং ধান পাকা পর্যন- খাড়া থাকে এবং নাবী।

বিআর ২০ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম নিজামী। এ জাতের ধানে অনেক সময় দাগ দেখা যায় । জাতটি ছিটিয়ে, লাইন করে এবং ডিবলিং করা যায়। বোনা আউশের এ জাতটি দেশের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ জেলার জন্য উপযোগী।

বিআর ২১ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম নিয়ামত। জাতটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিং পদ্ধতিতে বোনা যেতে পারে। বোনা আউশের এ জাতটি দেশের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ জেলার জন্য উপযোগী।

বিআর ২২ : আমন মৌসুমের উপযোগী। এ ধানের নাম কিরণ। এটি একটি আলোক সংবেদনশীল নাবী জাত। ঠিক নাইজারশইলের মতো। এর চাল আর নাইজারশাইলের মধ্যে পার্থক্য নেই বললেই চলে; আবার ফলনও হয় দ্বিগুণ। দেশের বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যা পরবর্তী সময়ে যে জমিতে যেভাবে নাইজারশাইলের চারা রোপণ করা হয় সে সময়ে ওই জমিতে একই নিয়মে কিরণ রোপণ করা যাবে। কিরণে প্রতি হেক্টর ১ টন ফলনও বেশি পাওয়া যাবে। রোপণের পর কিছু পরিচর্যা, যেমন জমিতে পানি সংরক্ষণ ও পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হয়। জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কিরণ ধানের ৪০-৫০ দিনের চারা ১-১৫ আশ্বিন পর্যন- রোপণ করা যায়। ১৫ আশ্বিনের পর এ ধান রোপণ করা উচিত নয়

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD