গাছ থেকে ভুট্টা তোলা শেষে জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ডাঁটায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে হলদে ফুল। সবুজ পাতা আর হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে ঝিঙে আর ঝিঙে। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের আকবর আলীর ঝিঙে খেতের চিত্র এটি।
জমি থেকে ফসল তোলা শেষ হলে জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ভুট্টা গাছের ডাঁটা খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ঝিঙে চাষ করছেন আকবর আলী। ওই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করে ভুট্টা আর আগাম আলুর মাঝখানে বাড়তি ফসল পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।
শুধু কৃষক আকবর আলী নন, ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক এখন ওই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ শুরু করেছেন। এতে তাঁদের বাড়তি আয়ও হচ্ছে।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়। খেত থেকে ভুট্টা তোলা শেষ হলে শুরু হয় আগাম আলু চাষের ব্যস্ততা। এ অল্প সময়টাতে অন্য কোনো ফসল চাষের সুযোগ নেই বলে চাষিরা জমি ফেলে রাখতেন। কিন্তু চাষিরা এখন সেই জমিতে ঝিঙে চাষ করে বাড়তি আয় করছেন।
জমিতে বীজ বপনের এক মাসের মধ্যে ভুট্টার গাছ বেড়ে ওঠে। সে সময় সাত থেকে আট ফুট দূরে দূরে ভুট্টা গাছের গোড়ায় ঝিঙের বীজ বপন করে দেন চাষি। বীজ অঙ্কুরোদগমের পর ভুট্টার ডাঁটা জড়িয়ে বেড়ে উঠতে থাকে ঝিঙে লতা। ভুট্টা তোলার উপযোগী হলে সেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। মোচা ভেঙে নেওয়ার পর খেতে ভুট্টার ডাঁটা থেকে যায়। আর সেই ডাঁটায় ঝিঙে লতা সেটাকে জড়িয়ে থাকে। কিছু দিনের মধ্যেই ঝিঙে লতা ফুল-ফলে ভরে ওঠে। তখন সেখান থেকে ঝিঙে তুলে বাজারে বিক্রি করেন চাষি।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৬০ হেক্টর জমিতে দুই শতাধিক চাষি এখন ওই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করছেন। সেই জমি থেকে সপ্তাহে অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০ মণ ঝিঙে পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষকদের ভাষ্য, ভুট্টার সাথি ফসল হিসেবে ঝিঙে আবাদ করার ফলে এক খরচেই দুটি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। ঝিঙে চাষের জন্য আলাদা কোনো খরচ লাগছে না। ফলে ওই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করে একদিকে যেমন পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি করে বেশ আয়ও হচ্ছে।
বুধবার সকালে বিরাশি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেঠো পথের দুই ধারে বিস্তীর্ণ সবুজ। পথের ওপর দাঁড়িয়েই দেখা যায়, ভুট্টার ডাঁটা জড়িয়ে সবুজ লতানো গাছ। পাতার ফাঁকে ফাঁকে হলদে ফুল আর ছোট-বড় ঝিঙে।
ওই গ্রামের কৃষক সামসুল আলম এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার সঙ্গে ঝিঙে আবাদ করেছেন। তিনি প্রায় ৫০ মণ ঝিঙে পেয়েছেন। বিক্রি করে পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।
একই গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ‘ভুট্টা চাষের পর আমরা আগাম আলু চাষি করি। এবার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার ডাঁটায় ঝিঙে চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার ঝিঙে বিক্রি করেছি। খেতে আরও যে পরিমাণ ঝিঙে আছে, তাতে আরও ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
এ ব্যাপারে রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ভুট্টার ডাঁটা ঝিঙের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
Leave a Reply