গত বৃহস্পতিবার ধীনগর গ্রামের পাশে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে ডাঁশা ডাঁশা আশ্বিনা জাতের আম। কিছু গাছে মার্বেল ও মটরদানা আকারের আম এবং কিছু গাছে মুকুল। অর্থাৎ বাগান থেকে আরও তিন মাস আম পাওয়া যাবে। আবদুর রহিম বলেন, বাগানের প্রায় দেড় শ আশ্বিনা জাতের আমগাছে মৌসুমের শুরুতে মুকুল এসেছিল। মুকুলের আম যখন মার্বেল আকারের, তখন বোঁটার গোড়া থেকে তা ভেঙে দেন। এরপর সীমিত পরিমাণ হরমোন, অর্থাৎ প্যাকলাবিউটাজল (কালটার নামেও পরিচিত) এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সার প্রয়োগ করেন। এতে মে-জুনে আবারও মুকুল আসে। সেই মুকুলের আম এখন ডাঁশা ডাঁশা হয়েছে। পরবর্তীকালে আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও মুকুল এসেছে। অর্থাৎ আশ্বিনা জাতের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বদলে গেছে।
কয়েক বছর আগে আমে কাটলার প্রয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল কৃষি বিভাগ। কালটার প্রয়োগে প্রথম দু-তিন বছর ভালো ফলন হলেও পরে আমগাছ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ আসতে থাকে। তবে পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগে কোনো ক্ষতি নেই বলে জানালেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বৈঞ্জানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, পরিমিত কাটলার ব্যবহারে এখন বিধিনিষেধ নেই। চাষিরা নিজেরাই এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে প্রয়োগ করছেন। সাধারণত আশ্বিনা, বারি-৪ ও ব্যানানা ম্যাংগো জাতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা বিজ্ঞানভিত্তিকভাবেই হওয়া সম্ভব।
গেল আমের মৌসুমে আশ্বিনা জাতের আম গড়ে আড়াই হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু অসময়ে এ আম ৯ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন আবদুর রহিম। তিনি আরও বলেন, একটি গাছের জন্য সারসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় হয়েছে ৭০০-৭৫০ টাকা। একটি গাছ থেকে আম পাওয়া গেছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার।
এর আগে বারোমাসি বারি-১১ ও কার্টিমন জাতের আমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে আম ফলানোর ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় আশ্বিনা জাতে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হয়েছে গত দুই বছর থেকে। বেশি লাভের নজির দেখে পরিচিত অনেকেই এ পদ্ধতিতে আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান আবদুর রহিম।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ফলচাষি মনামিনা কৃষি খামারের মালিক মতিউর রহমান বলেন, নাচোলের কয়েক আমচাষিকে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে মৌসুমের অনেক পরে আম ফলাতে দেখেছেন। তিনিও সামনের বছর এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে চান। তাঁর মতো আরও অনেকে এ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নেতৃস্থানীয় আমচাষি শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শামীম খান বলেন, এ বছর মুকুল বিলম্বিত করে উৎপাদিত আশ্বিনা আম কানসাট আম বাজারে ১২ হাজার টাকা মণ দরেও বিক্রি হয়েছে। আড়তদারেরা আমচাষিদের কাছ থেকে এই আম সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন।
আম গবেষণাকেন্দ্রে এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে মনে করেন শামীম খান। তিনি বলেন, সেই গবেষণার ভিত্তিতে এ পদ্ধতি সম্পর্কে আমচাষিদের মধ্যে প্রচার করা হলে অমৌসুমে আমের উৎপাদন বাড়বে। কমবেশি সারা বছরই আম পাওয়া যাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমকেন্দ্রিক অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: প্রথম আলো
Leave a Reply