1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
ভাসমান চাষপদ্ধতি / কৃষিতে স্থায়ী অভিযোজন-প্রক্রিয়া
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

ভাসমান চাষপদ্ধতি / কৃষিতে স্থায়ী অভিযোজন-প্রক্রিয়া

  • আপডেটের সময় : বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৬১ পড়া হয়েছে

ভাসমান চাষপদ্ধতি হাওর ও দুর্যোগকবলিত স্থানে সম্প্রসারণ করা গেলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাস পাবে। পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

টেপাপোনা, শেওলা, দুলালি লতা, নারকেলের ছোবড়া ও মাটি দিয়ে ভাসমান বিছানা (বেড) তৈরি করে তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজি, মসলাজাতীয় ফসল আবাদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব
টেপাপোনা, শেওলা, দুলালি লতা, নারকেলের ছোবড়া ও মাটি দিয়ে ভাসমান বিছানা (বেড) তৈরি করে তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজি, মসলাজাতীয় ফসল আবাদ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্ফীতি এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নে কৃষিজমির ব্যবহারের ফলে কৃষি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। খাদ্যনিরাপত্তায় চাপ বাড়ছে। এই চাপ সামলাতে বিশ্বজুড়ে আগাম প্রস্তুতির বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দিক থেকে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই পরিস্থিতিতে টেকসই অভিযোজনের পথ দেখাতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান চাষপদ্ধতি। এ পদ্ধতি হাওর ও দুর্যোগকবলিত স্থানে সম্প্রসারণ করা গেলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৮৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি মাটির উর্বরতা, বৃষ্টির ধরন, শস্যের ফলন ও খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি উপাদান এবং পুষ্টির জৈব লভ্যতাকে প্রভাবিত করে পুরো খাদ্যব্যবস্থাকে বিরূপ করে। এসব পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহে ম্যাক্রো এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হ্রাস করে।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমাগত উচ্চতা বৃদ্ধিতে অদূর ভবিষ্যতে কৃষিজমি জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের ভাসমান ধাপে ফসল চাষের পদ্ধতি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। স্থানীয় কৃষক এই পদ্ধতির উদ্ভাবক। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব। ভাসমান চাষাবাদের পদ্ধতিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হয় না বলে তা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য সহায়ক। এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ, আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া গেলে টেকসই অভিযোজনের পথ দেখাতে পারে ভাসমান কৃষি চাষপদ্ধতি। বাংলাদেশের ভাসমান সবজি চাষ এরই মধ্যে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির স্বীকৃতি পেয়েছে। এফএও ২০১৫ সালে এই স্বীকৃতি দেয়।

ভাসমান কৃষি কী

ভাসমান কৃষি (স্থানীয়ভাবে ধাপ চাষ নামে পরিচিত) হলো দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্লাবিত বাস্তুতন্ত্রের জন্য স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনী ফসল চাষব্যবস্থা। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বন্যা ও বিল এলাকার কৃষকেরা অন্তত ২০০ বছর ধরে বন্যা ও জলমগ্ন থাকা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘মাটিবিহীন চাষাবাদের’ দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন। বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের বিলসমূহে এই ভাসমান চাষ করা হচ্ছে। ফসল চাষের জন্য টেপাপোনা, শেওলা, দুলালি লতা, নারিকেলের ছোবলা ও মাটি দিয়ে ভাসমান বিছানা (বেড) তৈরি করে তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজি, মসলাজাতীয় ফসল ইত্যাদি আবাদ করা হয়।

সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল চাষ

গোপালগঞ্জের কৃষকেরা সাধারণত ভাসমান বিছানায় সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন করেন। বরিশালের বানারীপাড়া এবং পিরোজপুরে নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলায় সবজি ও মসলা উভয় জাতীয় ফসলের চারা উৎপাদন করা হয়। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উপযুক্ত অনুশীলন হচ্ছে এই চাষপদ্ধতি। পদ্ধতিটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং প্লাবিত অবস্থায় সবজি ও মসলা চাষের একটি সফল উপায় হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ২০১২ সাল থেকে ভাসমান কৃষিসংক্রান্ত বহুমুখী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভাসমান কৃষির জন্য ফসল, সবজি ও মসলাজাতীয় ফসলের মানসম্পন্ন চারা উৎপাদন, মাঠফসলের চারা উৎপাদন যেমন ভুট্টা ও সূর্যমুখী, অলতাজাতীয় গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সবজি চাষের কৌশল ‘ভাসমান বিছানা কাম ট্রলিস’ পদ্ধতি ব্যবহার করে লতাজাতীয় সবজি চাষের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা প্লাবিত ও প্লাবনহীন মডেল (নন-টাইডাল ও টাইডাল) তৈরি করে লতাজাতীয় সবজির সঙ্গে লতাহীন সবজি, মসলা ফসলের আন্ত, মিশ্র, বদলি ফসলসহ অন্য ফল, সমন্বিত সবজি ও মাছ চাষ নিয়ে গবেষণা করে ব্যাপক সফলতা পান। গবেষকেরা এই প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন, ‘ভাসমান ফসলের জন্য সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা’।

বানারিপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম (৫৫) বাবা-দাদার আমল থেকে ভাসমান সবজির চারা আবাদ করেন। দেড় বিঘা জমিতে এই পদ্ধতিতে আবাদ করে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার সবজি চারা বিক্রি করেন। সালাম বলেন, বিশারকান্দি গ্রামটি ভাসমান কৃষির জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রায় ১০০ কৃষক ভাসমান পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কৃষি খাতে ইতিবাচক প্রভাব

প্রধানত জোয়ার, অকালবন্যা এবং বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকা, মাটি ও পানির লবণাক্ততা, নদীতীরের ক্ষয়, প্রতিকূল আবহাওয়া ইত্যাদির কারণে দক্ষিণাঞ্চল ও হাওর অঞ্চলের আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। ভাসমান কৃষিপদ্ধতির অভ্যাস গড়ে তুললে এসব প্লাবিত ও নিমজ্জিত পতিত জমিকে ফসল উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব।

ভাসমান কৃষি সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ভাসমান কৃষির আওতাধীন জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর। এই চাষ সম্প্রসারণে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভাসমান কৃষির ওপর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে— ‘গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ জনপ্রিয়করণ’।

প্রকল্পটির পরিচালক আলীমুর রহমান বলেন, কৃষকেরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় এই কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন। এর আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে সমন্বিত চাষের আওতায় আনতে পারলে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করা সম্ভব। এরই মধ্যে এর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উদ্ভাবন করে বেশ সফলতা পাওয়া গেছে। শুধু শাকসবজি নয়, মসলা, লতাজাতীয় ফল, স্ট্রবেরিসহ অন্যান্য ফসলও সমন্বিতভাবে চাষ করে সফলতা এসেছে। এখন এসব প্রযুক্তি দক্ষিণাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সূত্র:প্রথম আলো

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD