1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
পেঁপে চাষ পদ্ধতি
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

পেঁপে চাষ পদ্ধতি

  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৬৫ পড়া হয়েছে

পেঁপে চাষ পদ্ধতি:

আজকে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করবো সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি নিয়ে এবং সবজি হিসাবে পেঁপে একটি অতিবলাভজনক অর্থকরী ফসল তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো সঠিক নিয়মে পেঁপে চাষ পদ্ধতি নিয়ে। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের মাঝে শেয়ার করে দিন।

পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল। পেঁপে গাছ লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট হয়। প্রায় কমবেশি সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল । কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু ভাবেই পেঁপে খাওয়া যায়, তরে কাঁচা অবস্থায় সব্জি এবং পাকলে ফল।

পেঁপে চাষে করনীয়:
জলবায়ু অনুসারে আমাদের গ্রীষ্মকালের ফসলগুলোর মধ্যে পেঁপে অন্যতম এবং চাষাবাদের জন্য এ সময়টাই হচ্ছে ভালো সময়। এ ছাড়া সারা বছরই পেঁপে চাষ করা যায়। জমিতে এবং বাড়ির সামান্য পরিসরে লাগাতে পারেন এ সবজি বা ফলটি। আমাদের দেশে অনেক জাত রয়েছে, তা থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার প্রিয় জাতটি। তবে পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।

পেঁপের জাত প্রকরণ:
পেঁপে বিভিন্ন জাতের হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিতি পেঁপে জাতগুলি হলো -১.ব্লুস্টেম, ২.কাশিমপুরী, ৩. যশোরি,৪.রাচি,৫.নউন ইউ, ৬.হানি ডিউ, ৭. ছোট পেঁপে, ৮. শাহী পেঁপে, ৯. শঙ্কর জাত।

মাটি নির্বাচন:
বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বিভিন্ন রকম আর মাটির গুনাগুণও আলেদা। তবে ভালো পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।

আইল নির্বাচন:
দৈঘ্য ২২ মিটার, প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া দরকার। উঁচু, চওড়া আইল পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ২ মিটার রাখতে হবে এবং মাদার আয়তন ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার। উঁচু জায়গার আকার ৪৫×৪৫×৪৫ সেন্টিমিটার ।

চারার পরিমাণ ও চারা রোপণের সময়:
প্রতি মাদায় ৩টি চারা ৩ কোণ আকারে রোপণ করতে হবে। এপ্রিল মাস পেঁপের চারা রোপণে উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও পেঁপের চারা রোপণ করা যায়।

আগাছা পরিষ্কার ও সেচ প্রদান:
পেঁপে জমির আইলে আগাছা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে। শীতকালে প্রতি ১০-১২ দিন এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৭ দিন পর পর সেচ দেয়া প্রয়োজন।

পুরুষ গাছ এবং গাছ পাতলা করা:

চারা রোপণের ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি মাত্র পুরুষ গাছ রেখে দিয়ে, বাকি পুরুষ গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে। প্রতি মাদায় উঁচু জায়গায় একটি করে স্ত্রী পেঁপে গাছ রাখতে হবে।

খুঁটি দেয়া:

বেশি ফল ধরলে বা ঝড়ের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে হলে শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে গাছের কান্ডের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।

পেঁপের রোগ বালাই:
বীজে রোগ আক্রমণ করলে চারা গজানোর আগেই পচে যায়। চারা আক্রান্ত হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের জল ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। তখন গাছ ঢলে পড়ে মরে যায় এবং সহজেই বাতাসে ভেঙে পড়ে। মোজাইক রোগে গাছ আক্রান্ত হলে পাতা সবুজ ও হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির হয়। অনেক সময় পাতা সম্পূর্ণ কুঁকড়ে যায়। এছাড়াও পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতার শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হয়। গাছ আকারে ছোট এবং ফলন কম হয়। এ রোগের ভাইরাস সাদা মাছি দ্বারা গাছ থেকে গাছে ছড়ায়।

ফল সংগ্রহ :
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। পেঁপে অল্প সময়ে ফল দেয় এবং প্রায় সারা বছরে পেঁপে গাছে ফল ধরে, এজন্য অনেক দিন ধরে সময় অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয় না। পেঁপে কাঁচা ও পাকাতেই দুই খাওয়া যায় বলে বাজারে পেঁপে অনেক চাহিদা। এজন্য পেঁপে চাষ করে অনেক লাভবান হয়া যায়।

পেপে উৎপাদন কৌশল:

জাত:

স্থানীয় পেঁপে ও শাহী পেঁপে বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হয়।
চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি

জলবায়ু মাটির প্রকৃতি:
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। শাহী পেঁপে সারাবছর চাষ করা যায়। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দো-আঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরণের মাটিতেই পেঁপে চাষ করা যায়।

চারা তৈরি:

১. বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

২. পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

৩. ১৫ X ১০ সে.মি. আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে।

৪. তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে একটি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে।

৫. একটি ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়।

চারা রোপণ পদ্ধতি:

১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।

২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।

৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।

৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।

সার প্রয়োগ:

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

রোগ-বালাই:

পেঁপের ঢলে পড়া রোগে প্রচুর গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পচা রোগও হয়ে থাকে। পিথিয়াম এ্যাফানিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। অনেক সময় জিংকের অভাবে মোজাইকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।

প্রতিকার:

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময় পরিচর্যা:

১. প্রতি গর্তে ৩টি চারা রোপণ করা যায়।

২. ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।

৩. পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।

৪. ফুল থেকে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।

৫. গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।

৬. দুই সারির মাঝখানে নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।

৭. ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

ফল সংগ্রহ:

ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ:

সাধারণত এক বছরের মাথায় পেঁপে গাছে ফল ধরে। একটি গাছে বছরে ২০ থেকে ৫০টি ফল ধরে সেই হিসেবে এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ৭৭০০ থেকে ১৬৭৫০টি পেঁপে ধরে।

পেঁপে উৎপাদন খরচ:

১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ফসল উৎপাদন খরচ
খরচের খাত পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা)
বীজ/চারা ৪০০টি ২০০০
জমি তৈরি ৪০০টি মাদা তৈরি ৩৬০০
পানি সেচ ২ বার ৪০০
শ্রমিক ৩ জন ৪৫০
সার প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার
এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। তাই এর জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই।

বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)টিএসপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৩ টাকা)ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=১৫ টাকা)এমপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৮ টাকা)জিপসাম=৩৪ গ্রাম (১ কেজি=১২ টাকা)বোরাক্স=৪ গ্রাম (১ কেজি=১৫০ টাকা)জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম (১ কেজি=৮০ টাকা) ৫০
কীটনাশক প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিজস্ব/দোকান জমি ভাড়া এক বছর ৪০০০ টাকা।মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।

মূলধন:

এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁপে চাষের জন্য প্রায় ৮০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ:

পেঁপে চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পেঁপে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

পেঁপে একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে পেঁপে জন্মে। তাই বাণিজ্যিক ভিওিতে পেঁপে চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সমভব।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD