রাজশাহীতে কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমবাগানে সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছে। মুকুলের ম–ম ঘ্রাণ এখন রাজশাহীর বাতাসে। কয়েক দিনের কুয়াশা ছাড়া এখনো আবহাওয়া আমের অনুকূলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার রাজশাহীতে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ফলন বাড়তে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এবার ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহীতে শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক জাহাঙ্গীর শাহ প্রায় ২০ বছর ধরে নিয়মিত আবহাওয়ার প্রতিদিনের খবর লিখে রাখেন। কৃষির উৎপাদনের ওপর আবহাওয়ার প্রভাব নিয়েও তিনি কাজ করেন। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুকুল থেকে আমের গুটি হয়। এ সময়ের কুয়াশা আমের গুটি বাঁধার জন্য ক্ষতিকর। এবার আমের মুকুল অনেক হয়েছে। আবার এ সময়ের মধ্যে সাত দিন কুয়াশাও ছিল। গত বছর এ সময়ে কুয়াশা ছিল পাঁচ দিন। তার আগের বছর ছিল চার দিন। কুয়াশায় হয়তো কিছু ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া রাতে গরম, সকালে ঠান্ডা—এ রকম আবহাওয়া আমের জন্য ক্ষতিকর। এমনটি এবারও হয়েছে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজশাহীতে আর ঠান্ডা নেই। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষিরা আমের পরিচর্যা করছেন। আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাব পরিচর্যায় কেটে যেতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যে গাছে গাছে ভালো গুটির উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভেতরেই আম হয়। এখন পর্যন্ত ভালো ফলনের আশা করা যায়।
রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়ে থাকে। গতকাল সোমবার সকালে চারঘাট ও বাঘার কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুকুলে আমগাছের পাতা ঢেকে আছে। প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলগুলোয় গুটি হচ্ছে।
বাঘা থেকে সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বিদেশে আম রপ্তানি করছে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ২৫০ থেকে ৩০০ বিঘা জমিতে আমবাগান আছে। এবার তাঁদের শত ভাগ গাছে আমের মুকুল এসেছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়াও আমের জন্য অনুকূলে। এ অবস্থা যদি শেষ পর্যন্ত থাকে, তাহলে আবার আমের বাম্পার ফলন হবে।
চারঘাট উপজেলা ডাকরা গ্রামের আমচাষি আলী আজগর বলেন, কুয়াশার কারণে আগাম মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। পরের মুকুলগুলো ভালো আছে। এবার যদি আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে গাছে প্রচুর আম হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আমের মুকুল ভালো আছে। আবহাওয়াও ভালো। বাম্পার ফলনের আশা করছেন তাঁরা।
সূত্র :প্রথম আলো
Leave a Reply