কলমি শাক এক প্রকারের অর্ধ-জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় লতা। কলমি শাক পানিতে কিংবা ভেজা মাটিতে জন্মে থাকে। বাংলাদেশে এটি শাক হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পরিবারের চাহিদা মিটাতে এ জাতীয় শাক সবজি চাষের বিকল্প নেই
কলমি শাকের পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে পানি- ৮৯.৭ গ্রাম, আমিষ – ৩.৯ গ্রাম, লৌহ – ০.৬ গ্রাম, শ্বেতসার – ৪.৪ গ্রাম, আঁশ – ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম – ০.৭১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন – ০.৯ মিলিগ্রাম, নায়াসিন – ১.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি – ৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি – ০.৫৪ মিলিগ্রাম, ক্যালোরি – ৩০ কিলো ক্যালোরি থাকে। কলমি শাকে ক্যালসিয়াম থেকে বলে এই শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের কলমি শাক খাওয়ানো উচিত। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ করে। জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পাবে। নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কলমি শাকের গুনাগুন অনেক।
জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ জমিতে লাগানোর ক্ষেত্রে জমির মাটি চাষ দিয়ে বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।জমি তৈরির পর সারি থেকে সারি ৮ ইঞ্চি দূরত্বে লাইন আকারে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পূর্বে বীজ ১২ ঘন্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রেখে অঙ্কুরোদগম করে নিলে বীজ গজানোর হার বৃদ্ধি পাবে।
চৈত্র (মধ্য মার্চ-মধ্য এপ্রিল) থেকে শুরু করে শ্রাবণ (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট) পর্যন্ত কলমি শাক চাষ এর জন্য বীজ বপনের উত্তম সময় বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই শাক সংগ্রহ করা যায়। প্রতি ১০ দিন পর পর শাক সংগ্রহ করা যাবে। লতা জাতীয় শাক হওয়ায় একই গাছ থেকে একাধিক বার শাক সংগ্রহ করা যাবে। শতাংশ প্রতি প্রায় ১৬০-১৮০ কেজি শাক সংগ্রহ করা যায়। ড়ির পাশে পতিত জমি থেকে শুরু করে বাড়ির আঙিনায়, এমন কি বিভিন্ন প্রকার মাটি বা প্লাস্টিকের টবে ও কলমি চাষ করে পরিবারে চাহিদা মিটানো যায় পাশাপাশি অর্থ ও উপার্জন করা যায়।
সার প্রয়োগঃ র্তমান পরিস্থিতিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে পর্যাপ্ত জৈব সার (শতাংশ প্রতি ৪০ কেজি জৈব সার) ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া অধিক ফলনের জন্য শতাংশ প্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি সার ব্যবহার করা যেতে পারে। ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া সারের ৩০০ গ্রাম জমি তৈরির সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি ৩০০ গ্রাম ৩ ভাগে ভাগ করে ফসল সংগ্রহের পর পর ৩ বারে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
>বাজারে প্রচলিত জৈব সার:
১. বায়োডার্মা সলিড/ট্রাইকোডার্মা (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড): মাটির উর্বরতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাটির ক্ষতিকর ছত্রাক ও নেমাটোড দমন করবে।
শতাংশ প্রতি ৩ কেজি। মাঝারি সাইজের টব প্রতি ৫০ গ্রাম। বড় সাইজের টব প্রতি ১০০ গ্রাম।
২. কাজী জৈব সার (কাজী এগ্রো ফার্ম): শুধু মাটির উর্বরতা বাড়াবে।
৩. এসিআই বাম্পার জৈব সার (এসিআই এগ্রো লিমিটেড): শুধু মাটির উর্বরতা বাড়াবে।
বাজারে প্রচলিত কলমি বীজ:
১. ইস্পাহানি গীমা কলমি (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)
২. ইউনাইটেড গীমা কলমি (ইউনাইটেড সীড কোম্পানি লিমিটেড)
৩. এ ছাড়াও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি ও খোলা/লুজ কলমি বীজ পাওয়া যায়।
তবে ভালো ফলন পেতে অবশ্যই ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা দরকার।
শতাংশ প্রতি বীজ প্রয়োজন ৩৫-৪০ গ্রাম
বাজারে প্রচলিত জৈব বালাইনাশক:
১. ইকোম্যাক ১.৮ ইসি (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)- পোকামাকড় দমনের জন্য। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২. বায়োডার্মা পাউডার (ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেড)- গোরাপচা, শিকড় পচা ও কান্ড পঁচা রোগের জন্য। প্রতি লিটার পানিতে ৩-৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ সাধারণত গিমা কলমির বীজ বপনের এক মাসের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়। এক মাস পরে গাছের আগার দিকের পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এর পর প্রতি এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর পর পাতা সংগ্রহ করা যাবে। গিমা কলমির বীজ একবার বপন করে সারাবছর শাক সংগ্রহ করা যায়। লতা জাতীয় শাক হওয়ায় একই গাছ থেকে একাধিক বার শাক সংগ্রহ করা যাবে।
Leave a Reply