শসা এক প্রকারের ফল। আমাদের দেশে দিন দিন এ ফলের চাষ বেড়েই চলেছে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে শসার চাষ না করায় অনেক চাষি ফলন নিয়ে হতাশ হন।
শসার পুষ্টিগুন : প্রতি ১০০ গ্রাম শসাতে ৯৪.৯ গ্রাম জলীয় অংশ এবং ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে । তাছাড়া নানাবিধ পুষ্টি উপাদান যেমন, চর্বি-০.১ গ্রাম , খনিজ পদার্থ- ০.৪ গ্রাম, আঁশ- ০.৪ গ্রাম , খাদ্যশক্তি- ২২ কিলোক্যালরি, আমিষ- ১.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রন- ১.৫ মিলিগ্রাম , অল্প ক্যারোটিন,ভিটামিন বি-১০.১৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.০২ মিলিগ্রাম ও শর্করা – ৩.৫ গ্রাম ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে ।
মাটি ও জলবায়ু : উর্বর দো-আঁশ মাটি ও অম্লক্ষারত্ব ৫-৫-৬.৮ শসা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ২৫-৩০ সেঃ গড় তাপমাত্রায় শসা সবচেয়ে ভাল জন্মে।
বপনের সময় : ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করা ভাল।সাধারণত জাত ভেদে ৭৫ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
বীজ বপন: প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ লাগাতে হয়৷ বীজ একদিন ও একরাত ভিজিয়ে-লাগানো ভালো।
জাত নির্বাচন: বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু জাতের শসার চাষ হচ্ছে এর মধ্যে বিদেশী জাতের অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি ২টি স্থানীয় জাত উৎপাদন করে থাকে বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামে। এছাড়াও বাংলাদেশী কয়েকটি বেসরকারী সবজি বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অনেকগুলো বিশুদ্ধ জাত ও হাইব্রিড (সংকর জাত) শসার জাত বাজার জাত করেছে। স্থানীয়ভাবে গ্রীন কিং, শিলা, আলাভী, বীরশ্রেষ্ঠ, শীতল, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, সানটং-৪, পান্ডা, ভেনাস, মাতসুরি, বাশখালী, মধুমতি, নওগা গ্রীন, লাকি-৭ ইত্যাদি জাত চাষ করা হয়।
জমি তৈরি:বার চারেক চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া হয়৷ আগাছা সম্পূর্ণ পরিষ্কার কেও ক্ষেত সমতল করে নিতে হবে৷
মাদা তৈরী : শসা চাষে ৫০-৮০ সে. মি. চওড়া ও গভীর-গর্ত তৈরী করতে হয়। ২-২.৫ মি: দূরে মাদা তৈরী করতে হয়।
সার-ব্যবস্থাপনা : একর প্রতি গোবর ২.০ টন, খৈল ১১৩ কেজি, টিএসপি ৬০ কেজি, এমপি ৪০ কেজি, ইউরিয়া ৪০ কেজি সার প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে সব সার গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে। বীজ বোনার ২০-২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের প্রথম অর্ধেক এবং প্রায় দেড় মাস পর ইউরিয়া সারের পরের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণ :চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি চারা থাকলে মাঠে লাগানোর ৬-৭ দিন পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল চারাটি তুলে প্রতি মাদায় ১ টি করে চারা রাখলেই হবে।
বাউনি দেওয়া : তারের নেট অথবা সুতলী অথবা বাশের কঞ্চির সাহায্যে বাউনি দিতে হবে। বাউনি/মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১টি দিলেই চলবে।
চারা উৎপাদন: নার্সারী বা বীজ তলায় চার তৈরী করে জমিতে লাগানো উত্তম। এক্ষেত্রে ৫০ঃ৫০ অনুপাতে পচা গোবর বা কম্পোষ্ট ও মাটি একত্রে মিশিয়ে ৬ী৮ ইঞ্চি সাইজের পলিইথিলিয়ানের ব্যাগে ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন : কাঁচা খাওয়ার জন্য শসা পাকানো হয় না। তবে রান্না করে খেতে হ’লে কিছু পাকিয়ে নেওয়া ভাল। কাজেই সবুজ থাকতেই শসা তুলে ফেলা হয়। জমিতে লক্ষ্য রেখে মাঝে মাঝেই শসা তুলে নেওয়া হয়। একবার সংগ্রহ আরম্ভ হ’লে ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফল তুলতে হয়। শসার জাত ভেদে বীজ বোনার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত শসা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
Leave a Reply