1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
‘আমার খেজুরবাগানের এখন যে অবস্থা, তাতে চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবে’
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

‘আমার খেজুরবাগানের এখন যে অবস্থা, তাতে চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবে’

  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ১১১ পড়া হয়েছে

সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে কিছু বীজ দেশে আনেন আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তি। এরপর নিজের একটি খেজুরবাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। হতাশা কাটিয়ে কয়েক বছর পর সফলতার দেখা পান। বর্তমানে তাঁর খেজুরবাগান থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। মোতালেবের দেখাদেখি স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

আবদুল মোতালেব ময়মনসিংহের ভালুকার উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুরবাগানে কাজ করেছেন। ২০০১ সালের শেষ দিকে নিজে খেজুর চাষের পরিকল্পনা দেশে ফেরেন। এ সময় উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসেন। বাড়ির আঙিনায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোপণ করে ২৭৫টি চারা। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুরবাগানে প্রায় ৩ হাজারের বেশি খেজুরগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে।
গত বুধবার মোতালেবের খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের খেজুর। মোতালেব জানান, আজোয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে ৪ হাজার ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিক্রি হয় খেজুরের চারাও। কাটিং করা প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারা ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করি নাই। দেশেও কৃষিকাজ করি এবং সৌদি আরবে গিয়ে আমি কৃষিকাজ পাই। সেখানে খেজুরবাগানে কাজ করে খেজুর খেয়ে মনে হলো, যদি দেশে একবার এই খেজুর চাষ করতে পারি তাহলে জীবন সার্থক, আর বিদেশে যেতে হবে না। ২০০১ সালে বাড়িতে আসার সময় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসি, সেখান থেকে মাত্র ২৭৫টি গাছ তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণা করে ৭টি মাতৃগাছ পাই, বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন আমার বাগানের যে অবস্থা, তাতে আমার পরবর্তী চৌদ্দ পুরুষ বসে খাবে, আমার সন্তানদের আর কষ্ট করতে হবে না। বাগানে এখন শুধু মাতৃ গাছ আছে। আমাদের বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে মেলে।’
বাবার পাশাপাশি মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমানও পড়ালেখার পাশাপাশি খেজুরবাগান নিয়ে কাজ করছেন। দেশি ও বিদেশি জাতের চারা ক্রস করে রসের জন্য ৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ হাজার গাছ নিয়ে নতুন একটি বাগান করেছেন বাবা-ছেলে। এর মাধ্যমে গুড় উৎপাদন করার কথা জানিয়েছেন।
অনার্স প্রথম বর্ষ পড়ুয়া মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে বাবার সঙ্গে খেজুরবাগানে কাজ শুরু করি। আমি খেজুর গাছে কাটিং করে নতুন চারা উৎপাদন কৌশল শিখেছি। এ ছাড়া দেশি ও সৌদি খেজুরগাছ ক্রস করে একটি জাত উদ্ভাবন করেছি, যেটি থেকে প্রচুর রস উৎপাদন সম্ভব।’

মোতালেবের খেজুর চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার আরও অনেকে খেজুর বাগান করতে শুরু করেছেন। তাঁর বাগানে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্যোক্তারা গিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ধারণা নেন ও গাছের চারা কেনেন। মোতালেবের বাগানের পাশেই ২০০৮ সাল থেকে বাগান শুরু করেন আফাজ পাঠান। তিনি বলেন, মোতালেবের কাছ থেকে চাষ প্রযুক্তি শিখে এখন চারটি স্থানে ১০ একরের বাগান করেছেন। বাগানগুলোয় ভালো ফলন হচ্ছে। বছরে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। শিক্ষিত বেকার তরুণ-যুবকেরা এই খেজুরবাগান করে জীবন পাল্টে দিতে পারে।
বাগানটিতে ঘুরতে আসা শফিউল্লাহ আনসারি নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে উৎপাদিত খেজুরগুলো তুলনামূলকভাবে বড় ও খেতে সুস্বাদু। দেশের চাহিদা পূরণের জন্য সৌদি খেজুর আমদানি করতে হয়। কিন্তু দেশে এটি সম্প্রসারিত হলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং কৃষকেরাও লাভবান হবেন।’

সৌদি খেজুর চাষের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভালুকা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খেজুরে রোগবালাই খুব কম হয়। আমরা এমন উদ্যোক্তাদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সরাসরি কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে খেজুরবাগানে আমরা কোনো সহযোগিতা দিতে পারি না। সরকারিভাবে প্রকল্প নিয়ে কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসলে তাঁরা উপকৃত হবেন ও চাষি বৃদ্ধি পাবে।’

গত বুধবার দুপুরে খেজুরবাগানটি দেখতে যান ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ। তিনি বলেন, মোতালেব সৌদি আরবে চাকরি করতে গিয়ে সেখান থেকে প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে দেশের মাটিতে চাষাবাদ শুরু করেন। সৌদি খেজুর চাষের সম্প্রসারণ ও প্রণোদনার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে উত্থাপন করা হবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD