কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা গ্রামের তরুণ কৃষক আবু বাক্কার সিদ্দিক অসময়ে ব্ল্যাক কুইন জাতের তরমুজ চাষ করে চমক দেখিয়েছেন। মাত্র ৭০ দিনে ৪০ শতাংশ জমি থেকে এক লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, তার জমিতে ছোট ছোট মাচায় ঝুলছে কালো রঙের নানান আকৃতির তরমুজ। ভেতরে টকটকে লাল আর স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা সরাসরি জমিতেই তরমুজ কিনতে ভিড় করছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, তরমুজ একটি লাভজনক ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচে কৃষকেরা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে উপজেলায় তরমুজ আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে, যার বেশিরভাগই চণ্ডিপাশা এবং কিছু বুরুদিয়া ইউনিয়নে। খোরপোষ থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন।
আবু বাক্কার জানান, কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে তিনি এ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে তিনি ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। মৌসুম শেষে বিক্রি হবে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার মতো। এতে তার লাভ দাঁড়াবে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘আগে ধান বা সবজি চাষ করতাম, লাভ কম ছিল। তরমুজ চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হয়েছি। আমারটা দেখে আশপাশের কয়েক যুবকও ব্ল্যাক কুইন তরমুজ চাষ শুরু করেছে। তাদের ফলনও ভালো হয়েছে।’
স্থানীয় কৃষক হযরত আলী বলেন, ‘আবু বাক্কার অসময়ে তরমুজ চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। আগামী বছর আমিও কৃষি অফিসের সহায়তায় এ জাতের তরমুজ চাষ করবো।’
চণ্ডিপাশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা মাঠে থেকেই কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি—কীভাবে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম স্যারও সময় নিয়ে মাঠে আসেন, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ বিঘা জমিতে ব্ল্যাক কুইন তরমুজ আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ব্ল্যাক কুইন তরমুজ তাইওয়ান থেকে আনা বিশেষ জাত, যার প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৩-৫ কেজি। শীত ছাড়া সারাবছরই এ জাতের তরমুজ চাষ করা সম্ভব। আগামীতে আরও বেশি জমিতে আবাদ বাড়বে।’
অসময়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় আবু বাক্কার সিদ্দিক এখন বৃহৎ পরিসরে ব্ল্যাক কুইন তরমুজ আবাদে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চান।
Leave a Reply