ফেনীর দাগনভূঞার প্রথম মাল্টা বাগান এখানকার উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এখানে মাল্টা চাষে সফলতার মুখ দেখছেন তরুণ উদ্যোক্তা নুরুল হায়দার কচি। তাই তিনি ব্যবসার পাশাপাশি মনোযোগ দিয়েছেন কৃষিতে। শুরু করেছেন সমন্বিত ফলের চাষ।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ রয়েছে কচির বাগানে। তার বাগানে ৩৫০ বেশি মাল্টা গাছ রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে আম, পেয়ারা ও লেবুর সমন্বিত বাগান।
নুরুল হায়দার কচি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামের জালাল আহম্মদের ছেলে। তিনি ফেনী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে চট্টগ্রামে ব্যবসা করেন। গ্রামের বাড়িতে প্রায় ২ একর জায়গা পরিত্যক্ত পড়ে আছে দেখে তিনি সমন্বিত ফলের চাষ শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ একর জমিতে কচির মাল্টা বাগান। সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছে ঝুলে আছে বারি-১ জাতের মাল্টা। কচির বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা।
২০১৯ সালে করা কচির মাল্টা বাগানে রয়েছে সবজি ক্ষেত। একদিকে ফলের বাগান অন্যদিকে সবজি ক্ষেত থেকে হচ্ছে বাড়তি আয়। সমন্বিত এ বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন দর্শনার্থীরা। কচির স্বপ্ন দাগনভূঞা উপজেলার প্রথম এই মাল্টা বাগান কৃষিতে আরও সমৃদ্ধি আনবে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে।
বাগান দেখতে আসা সিলোনিয়া হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, এখানে মাল্টা চাষ হচ্ছে এটা জানা ছিল না। লোকমুখে শুনে কচির বাগান দেখতে এলাম। খুব ভালো লাগলো। ব্যবসায় এর পাশাপাশি কৃষিকাজেও যে সফল হওয়া যায় কচি তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, কচির মাল্টা বাগান বেশ সাড়া ফেলেছে। ওর বাগান দেখে আমিও চেষ্টা করছি কিছু করার। ধান চাষের চেয়ে মাল্টা দিয়ে ভালো আয় করা সম্ভব।
এ বিষয়ে নুরুল হায়দার কচি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন পাঁচগাছিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের বাস্তবায়নে ১.৫০ একর জমিতে বারি মাল্টা-১, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি আম-৪ (বারমাসী), পেয়ারা থাই-৩, থাই-৫ বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগান প্রদর্শনী দেয়। শখের বশে আমি এই বাগান করেছি। সপ্তাহে দুদিন আমি চট্টগ্রাম থেকে এসে সময় দিই। পাশাপাশি কয়েকজন কর্মচারী নিয়মিতভাবে কাজ করেন। আমার বাগানে বারি-১ জাতের মাল্টা বাণিজ্যিক চাষ শুরু করছি। আধা একরে রয়েছে আম ও পেয়ারা ও লেবুর সমন্বিত বাগান। মণপ্রতি মাল্টা পাঁচ হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছরে এক টন মালটা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। দ্বিতীয় বছরে দুই টন, তৃতীয় বছরে চার টন মাল্টা বিক্রি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বেকাররা মাল্টা চাষ করতে পারেন। কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলে এখন বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান দেখা যায়। আমার শখের বাগান দেখে অনেকে কৃষি কাজে উৎসাহ পাবে এবং স্বাবলম্বী হবো।
কচি বলেন, একবিঘা জমিতে মাল্টা চাষে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে মৌসুমে লাভ হবে লাখ টাকার বেশি।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, উপজেলায় এই প্রথম মাল্টা বাগান করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নুরুল হায়দার কচি। পাঁচগাছিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের সমন্বিত বাগানের আওতায় এ বাগানটি তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাকে এই কাজের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। নুরুল হায়দার কচির এ মাল্টা চাষ দেখে তরুণ উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন, অন্যদিকে মাল্টা চাষ এ উপজেলায় আরও সম্প্রসারিত হবে।
Leave a Reply