সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে দিন দিন বৃষ্টির পরিমাণ কমছে। ফলে বৃষ্টির জলে পুষ্ট চাষাবাদের পরিমাণও ক্রমছে কমে আসছে। এই পরিস্থিতিতে কম জল ব্যবহার করা যায় এমন চাষের দিকে এখন ঝুঁকছেন কৃষকরা। এক্ষেত্রে লাভজনক ও তুলনামূলক কম পরিশ্রমে চাষ করা যায় এমন ফসল হিসাবে ভুট্টা চাষের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। এই চাষে খুব বেশি জলের প্রয়োজন হয় না। তাই মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে ভুট্টা চাষে কৃষিজীবীদের মধ্যে ক্রমশ আগ্রহ বাড়ছে। এখন পাকা সোনালি ভুট্টা চাষে ঘরে নগদ কড়ি তুলছেন কৃষকরা। মুখে ফুটছে হাসিও।
ভুট্টা চাষের প্রকৃত সময়: মোটামুটি সারা বছর ভুট্টার চাষ করা যায়। তবে এই চাষের মরশুমকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল প্রি-খারিপ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি, খারিপ চাষের উপযুক্ত সময় জুন থেকে জুলাই মাস এবং রবি মরশুমের সঠিক সময় অক্টোবর মাসের প্রথম থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
জমি তৈরির পদ্ধতি: মূলত দোআঁশ মাটির ফসল ভুট্টা। চাষের আগে খুব ভাল করে জমি চষে নিতে হবে। জমিতে যেন একটুও আগাছা না থাকে। বীজ বোনার জন্য ভেলি তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি সারির ভেলির দূরত্ব হবে নূন্যতম ৬০ সেন্টিমিটার এবং একটি গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব হতে হবে ২০ সেন্টিমিটার। পাঁচ থেকে ছ’সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বুনতে হবে এবং এক মিটার এলাকায় সর্বাধিক আটটি গাছ রাখলে উচ্চ ফলন পাওয়া যাবে। বীজ বোনার আগে প্রতি একর জমি পিছু ১০ কিলোগ্রাম ক্লোরপাইরিফস প্রয়োগ করতে হবে। এর ফলে উঁই পোকার হাত থেকে জমি রক্ষা করা যাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ভুট্টা গাছ সার গ্রহণ করে মাটি নষ্ট করে দেয়। ফলে জমি তৈরির সময় অবশ্যই একর প্রতি দু’টন কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হবে।
সার প্রয়োগের বিধি: ভুট্টা মূলত দু’রকম হাইব্রিড এবং কম্পোজিট। এখানে আমরা হাইব্রিড ভুট্টা চাষ নিয়ে আলোচনা করছি। কেননা, কম্পোজিট ভুট্টার চাষ জেলাতে হয় না বললেই চলে। বীজ বোনার আগে প্রতি একর জমি পিছু ৪২ কিলোগ্রাম ইউরিয়া, ১৭৫ কিলোগ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট এবং ১৬ কিলোগ্রাম পটাশ সার মূল সারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ বীজ বোনার ৩০ দিন পর ৪২ কিলোগ্রাম ইউরিয়া, ১৫ কিলোগ্রাম পটাশ চাপান সার হিসেবে প্রয়োগ করা জরুরি। তবে তৃতীয় দফার চাপান সার দ্বিতীয় দফার সমপরিমাণে দিলেই চলবে।
সেচের গুরুত্ব:
ভুট্টা চাষেও জমিতে তিনবার সেচ দিতে হয়। প্রথমে চাপান সার প্রয়োগের সময়। দ্বিতীয়বার গাছের উচ্চতা হাঁটু পর্যন্ত হলে এবং শেষবার স্ত্রী ফুল ফুটলে অর্থাৎ মোচাতে দানা দেখা গেলে আরও একবার সেচ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোঁড়ায় যেন জল না লাগে কিংবা জমে থাকে।
পোকার হাত থেকে রক্ষা: প্রথমত অনুখাদ্য হিসেবে বীজ বোনার ৩০ দিন পর ১০ লিটার জলে পাঁচ গ্রাম জিংক স্প্রে করা দরকার। পাশাপাশি ভুট্টার দানা বেশি পেতে পরাগ মিলনের সহায়ক বোরন ১০ লিটার জলে ২০ গ্রাম মিশিয়ে দিতে হবে। ভুট্টাতে মূলত ঝলসা ও মরিচা রোগের প্রার্দুভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই রোগ ঠেকাতে ম্যাঙ্কোজেব যাকে কৃষকরা এম-৪৫ হিসাবে চেনেন, সেটি প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম হিসাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ২০১৮ সালে কর্ণাটকের পর এখানেও ফলে আর্মি ওয়ার্ম পোকার হামলা শুরু হয়েছে। এই পোকা দমন করা অত্যন্ত কষ্টকর।
Leave a Reply