পুরো জমি বাঁশের চাটাইয়ে ঢাকা। নিচে সারি সারি বীজতলা। এগুলোতে বপন করা হয়েছে শীতকালীন সবজির বীজ। এ কাজে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার অনেক কৃষক এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাঁরা জানালেন, সবজি উৎপাদনের চেয়ে চারা উৎপাদন বেশি লাভজনক। প্রতিবছরই এ সময়টাতে ব্যাপকভাবে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করেন তাঁরা।
মুন্সিগঞ্জজুড়েই বাণিজ্যিকভাবে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চারা উৎপাদন করা হয় সদর উপজেলায়। এ উপজেলার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এ জেলায় প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি হয়ে থাকে। সদর উপজেলার ভট্টাচার্যেরবাগ এলাকার কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, ‘গত ১০ বছর অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দেখেছি সবজির চেয়ে চারা উৎপাদনে প্রচুর লাভ। তাই এ বছর প্রথমবারের মতো ৩০ শতাংশ জমিতে চারার আবাদ করেছি।’
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সবজির চারা উৎপাদনের জন্য মুন্সিগঞ্জ সমগ্র দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এখানকার চারা সব জেলার চেয়ে উৎকৃষ্ট। মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অন্তত ৪০ জন কৃষক শীতকালীন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি চারা উৎপাদন করেন। প্রতিবছর উৎপাদিত চারা বিক্রি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।
মুন্সিগঞ্জের কয়েকটি এলাকার কৃষক চারা উৎপাদনকে প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। মুন্সিগঞ্জের চারা উৎপাদনে জৈবসার ও খৈল ব্যবহার করা হয়। এ কারণে চারার গুণগত মান ভালো। বেশি ফলন ও লাভের জন্য সাভার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশীদ আলম বলেন, মুন্সিগঞ্জের শীতকালীন সবজি চাষ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এর প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ব্যাপক চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব চারা মুন্সিগঞ্জের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। চারা বিক্রির সঙ্গে জড়িত কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এসব চারার গুণগত মানও ভালো। যেসব কৃষক ভালো ফলন চান, তাঁরা মুন্সিগঞ্জের সবজির চারা নিয়ে আবাদ করতে পারেন।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ৭৭৭, সিরাযুথি, হিমাযুথি, ফ্রেশ, স্নো হোয়াইট, মারবেল, কার্তিকা, ষাইটশা, চালানি ষাইটশা জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চারার। পঞ্চসার এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, আগস্টের মধ্যভাগে ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা চাষ করেন। এতে তাঁর ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সে চারা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। একই বীজতলায় আরও তিনবার চারা উৎপাদন হবে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চারা উৎপাদনের কাজটি বেশ কঠিন। প্রতিটি ধাপের কাজ করতে হয় খুব সাবধানে। অঙ্কুরিত হওয়ার পর ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। চারা অতিরিক্ত রোদ ও বৃষ্টি সইতে পারে না। এ জন্য চাটাই বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। চারায় পানি দেওয়া বা আগাছা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। চারা উৎপাদন কাজে শ্রমিকদেরও হতে হয় দক্ষ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিবছর আগস্টের মাঝামাঝি চারা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এক মৌসুমে একেকটি বীজতলায় তিন-চারবার চারা উৎপাদনের করা হয়। মুন্সিগঞ্জে প্রতিবছরই চারা উৎপাদনকারী কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে বংশপরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে সবজির চারা চাষ করছেন। প্রতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন কোটি চারা উৎপাদিত হয়, যা সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকায় বিক্রি হয়।
সূত্রঃ প্রথম আলো
Leave a Reply