নার্সারীর সংজ্ঞাঃ
যে স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছোট চারা বা উদ্ভিদের কলম উৎপাদন করা হয় এবং রোপনের পূর্ব পর্যন্ত যত্নসহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাকে নার্সারী বলে। এখানে অতি যত্নের সাথে ফল, ফুল, শাকসবজি ও মসলাসহ যে কোন গাছের চারা ও কলম তৈরী করা হয়।
নার্সারীর গুরুত্বঃ
আধুনিক কৃষিতে নার্সারীর গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সারী ছাড়া কৃষি কাজ অসম্পূর্ণই বলা চলে। এর প্রধাণ কাজ হলো চারা উৎপাদন ও চারার যত্ন নেয়া। তবে প্রকৃতপক্ষে নার্সারীতে বীজ উৎপাদন, অংগজ চারা উৎপাদন, বিভিন্ন রোপন দ্রব্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, জাত উৎপাদন, ক্ষণস্থায়ী গাছের ব্যবস্থাপনা, স্থায়ী গাছের ও বীজ উৎপাদনকারী মাতৃগাছের সঠিক পরিচর্যা করা ইত্যাদি কর্মকান্ড করা হয়। নার্সারি কেবল উন্নতমানের বীজ ও চারার সরবরাহই নিশ্চিত করেনা জনগনের কর্মসংস্থাসহ পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। যে এলাকায় ভাল নার্সারী আছে সে এলাকায় গাছ-পালা, ফুল-ফল ও শাক-সবজির সরবরাহ বেশী থাকে। ফলে মানুষের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
নার্সারীর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। ছোট ছোট নার্সারী থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কারণ এক বর্গ মিটার জায়গায় কয়েক হাজার চারা উৎপাদন করা যায়। অনেক চারা বিক্রয়ের উপযোগী করতে মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ সময় লাগে। আগাম চারা উৎপাদন করতে পারলে লাভও কয়েকগুন বেড়ে যায়। একটি ভাল নার্সারী থেকে অল্প সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই নার্সারী স্থাপন করে নিজে লাভবান হওয়া যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায় এবং দেশকে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা যায়।
নার্সারীর প্রকারভেদঃ
(ক) অর্থনৈতিক বিবেচনায় নার্সারী
১। গার্হস্থ্য নার্সারীঃ এই প্রকারের নার্সারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে স্বল্প জায়গায় ব্যক্তি তার নিজ বাড়িতে তৈরী করে থাকে। এতে ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী ফুল, ফল বা বনজ চারা উত্তোলন করে।
২। ব্যবসায়িক নার্সারীঃ ছোট চারা বা কলমের চারা উত্তোলন করে বিক্রয়ের জন্য যে নার্সারী স্থাপন করা তাকে ব্যবসায়িক নার্সারী বলে। এসব নার্সারীতে ফুল, ফল, সবজি, মসলা ও বনজ চারা তৈরী করে বাজারজাত করে। বর্তমানে উপশহরে, বন্দরে এবং গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের নার্সারী দেখা যায় ।
(খ) ব্যবহার ভিত্তিক নার্সারী
১। ফলের নার্সারীঃ নার্সারীতে শুধু ফলের চারা উৎপাদন করা হয়।
২। ফুলের নার্সারীঃ শুধু নানা জাতের ফুলের চারা উৎপাদন করা হয়।
৩। বনজ নার্সরীঃ শুধুমাত্র বনজ উদ্ভিদ ( শাল, মেহগনি, সেগুন, রেইনট্রি ইত্যাদি ) এর চারা উৎপাদন করা হয়।
৪। সবজি নার্সারীঃ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চারা উৎপাদন করা হয়।
৫। মসলার নার্সারীঃ মসলা ফসলের চারা উৎপাদন করা হয়।
৬। অর্কিড নার্সারীঃ শুধুমাত্র নানা জাতের অর্কিডের চারা উৎপাদন করা হয়।
৭। ক্যাকটাস ও ফার্নের নার্সারীঃ ক্যাকটাস ও ফার্নের চারা উৎপাদন করা হয়।
(গ) স্থায়িত্বের ভিত্তিতে নার্সারী
১। অস্থায়ী নার্সারীঃ যে সমস্ত নার্সারী একটি নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট বাগানের জন্য তৈরী করা হয় তাকে অস্থায়ী নার্সারী বলে। অস্থায়ী নার্সারী সাধারনত বাগান এলাকার নিকটে তৈরী করা হয়। নির্দিষ্ট কর্মকান্ড শেষে এ সকল নার্সারীর কোন অস্তিত্ব থাকে না।
২। স্থায়ী নার্সারীঃ যে নার্সারীতে বছরের পর বছর সব সময় চারা উৎপাদন ও উত্তোলন করা হয় তাকে স্থায়ী নার্সারী বলা হয়। যোগাযোগের সুব্যবস্থা রয়েছে এরূপ বিভিন্ন স্থানে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে স্থায়ী নার্সারী স্থাপন করা হয়।
(ঘ) আকার অনুযায়ী নার্সারী
১। ছোট নার্সারী
২। মাঝারী নার্সারী
৩। বড় নার্সারী
Leave a Reply