ফসলের জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু দেশে এ ব্যাপারে তেমন কোনো বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় এসব রাসায়নিকের ব্যবহার কমছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে। জানা গেছে, দেশে বছরে ৫৫ হাজার টনেরও বেশি রাসায়নিক সার এবং ৪০ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় ক্ষেতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানা হয় না কোনো নিয়মনীতি। বস্তুত কতটুকু জমিতে কী পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় এবং ব্যবহারের কতদিন পর ফসল উত্তোলন করতে হয়, এসব বিষয়ে দেশের সিংহভাগ কৃষকের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই। ফলে স্বভাবতই অধিক ফলনের বিষয়টিই কৃষকদের কাছে গুরুত্ব পায়, অন্যকিছু নয়।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
প্রথমত, এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসযন্ত্রে নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেকেই কিডনি ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি গর্ভবতী মায়েরা ত্রুটিযুক্ত বা অসুস্থ সন্তান জন্ম দেন।
দ্বিতীয়ত, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর।
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ফসলের মাঠ গড়িয়ে নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়ে গিয়ে মাছের মৃত্যুর কারণ ঘটাচ্ছে। শুধু মাছ নয়, অনেক পাখি ও প্রাণীও হারিয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে।
তৃতীয়ত, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ভবিষ্যৎ ফসল উৎপাদন ক্ষেত্রেও।
কারণ এতে কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা শক্তি। মরে যাচ্ছে ফসলের জন্য উপকারী পোকা। কাজেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। কৃষক তার জমিতে অধিক ফলন চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
সেক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদের যেসব পদ্ধতি রয়েছে, তা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক প্রচলনের পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের কোনো কোনো স্থানে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে ভালো ফলনের নজির তৈরি হচ্ছে।
বৃহত্তর কৃষক সমাজের কাছে এসব উদাহরণ তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়কে এসব ব্যাপারে আরও বেশি তৎপর হতে হবে।
Leave a Reply