যশোরে এবার শর্ষের ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। এ জন্য এ বছর জেলায় শর্ষের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে শর্ষের দামও ভালো। শর্ষে চাষ করে এবার খুশি জেলার কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, আগের বছর (২০২১-২২) রবি মৌসুমে শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার হেক্টর জমি। চাষ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে। চলতি রবি মৌসুমে (২০২২-২৩) শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার ৯ হাজার ২১ হেক্টর বেশি জমিতে শর্ষের চাষ হয়েছে।
এ বছর যশোর সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৫৭ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩ হাজার ৩৫ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর, মনিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমের শুরুতে শর্ষে চাষে উৎসাহী করতে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। জেলার ৩১ হাজার ৫০০ কৃষককে ১ কেজি করে বারি শর্ষে-১৪, বারি শর্ষে-১৭, বারি শর্ষে-১৮ ও বিনা শর্ষে-৯ জাতের বীজ এবং ১০ কেজি করে ডিএপি (ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ১০ কেজি করে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার দেওয়া হয়েছে। উচ্চফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয় দুই ধরনের জাতের শর্ষের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টরি-৭, টরি-১০, বারি শর্ষে-১৪, বারি শর্ষে-১৭, বারি শর্ষে-১৮ ও বিনা শর্ষে-৯ জাতের চাষ বেশি জমিতে হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাতের শর্ষে চাষ করায় ফলন কম হতো এবং উৎপাদনে সময় বেশি লাগত। এ কারণে কৃষকেরা শর্ষে চাষ কমিয়ে দেন। তবে ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে অধিক ফলনশীল এবং কম জীবনকালের বারি শর্ষে-১৪ জাত চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ জাতের শর্ষে মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি বিঘায় ফলন হয় চার–পাঁচ মণ। শর্ষে কেটে ওই জমিতে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়। এতে কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত হয়। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে বারি শর্ষে-১৮ জাত চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর জীবনকাল প্রায় ১০০ দিন। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৮-১০ মণ।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাকেন্দ্র, যশোরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বারি শর্ষে-১৮ জাতটি ক্যানোলা গুণসম্পন্ন। এই জাতের বীজের তেলে ইরোসিক অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক কম এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। ফলন অনেক বেশি। অন্যদিকে অন্যান্য জাতের শর্ষের জীবনকাল ৯৫ থেকে ১১২ দিন পর্যন্ত এবং ইরোসিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি।
গত শুক্র ও শনিবার জেলার মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের সব শর্ষে পেকে গেছে। অনেক খেত থেকে শর্ষে তোলা হয়েছে। বেশির ভাগ খেতে শর্ষে তোলা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক।
এসব এলাকায় এক কাঠায় ২ দশমিক ৪ শতক হিসাব করা হয়। মনিরামপুর উপজেলার দোনার গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান এবার ৩৫ কাঠা জমিতে বারি শর্ষে-১৮ জাত চাষ করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২৮ কাঠা জমির শর্ষে তুলেছেন। সেখান থেকে তিনি সাড়ে ১২ মণ শর্ষে পেয়েছেন। ওই শর্ষে থেকে তিনি ৩ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে সাড়ে সাত মণ শর্ষে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার শর্ষের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বারি শর্ষে-১৮ জাতের তেল খুব ভালো। বাজারে শর্ষের দামও ভালো। শর্ষের ফলন ও দামে আমি খুব খুশি।’
বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম এবার ১৫ কাঠা জমিতে টরি-৭ জাতের শর্ষে চাষ করে পাঁচ মণ শর্ষে পেয়েছেন। ওই শর্ষে তিনি ৩ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার শর্ষের ফলন খুব ভালো হয়েছে। শর্ষে কেটে বোরো ধান লাগিয়েছি।’
অভয়নগর উপজেলার বাণীপুর গ্রামের কৃষক রফিক ফকির এবার ২০ কাঠা জমিতে টরি-১০ জাতের শর্ষের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, খেত থেকে শর্ষে তোলা শুরু করেছেন। সাত মণের মতো শর্ষে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, এ বছর শর্ষের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষক। তিনি বলেন, বারি শর্ষে-১৪ বপনের ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। বারি শর্ষে-১৪ আবাদের পর ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করা যায়। বোরো আবাদে জমিতে সারের পরিমাণও কম লাগে
সূত্র :প্রথম আলো
Leave a Reply