সরেজমিনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাজারে চাষি ও ব্যবসায়ীদের ফুল ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। ভোর থেকেই কেউ এসেছেন সাইকেলে করে, কেউবা মোটরসাইকেলে, বড় কৃষকরা নিয়ে এসেছেন স্ক্রুটার কিংবা ভ্যানে করে। সারি সারি ফুল বিক্রির এমন দৃশ্য দেশে খুব কমই দেখা মিলবে। এমন কর্মযোগ্য চলে পুরো এক ঘণ্টা। টার্গেট সামনের বিশেষ দিবসকে ঘিরে। বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখেই সর্বোচ্চ দাম পাওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ যেন পিছিয়ে না পড়েন। মাত্র এক ঘণ্টার এই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ লাখ টাকার ফুল। এই ফুলগুলো যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলায়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের মেহেদী হাসান রাজু জানান, তিনি ১৭ বছর ধরে ফুলচাষ করে আসছেন। প্রথমে তিন বিঘা জমিতে (৩৩ শতকে বিঘা) ফুল চাষ শুরু করলেও বর্তমানে গোলাপ, গাঁদা, রজনী গন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা ও কামেনী পাতাসহ অনান্য ফুলের চাষ রয়েছে তার ১৭ বিঘা জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছরও ফুলের বাজার অনেক ভালো পেয়েছেন তিনি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেও চলছে ফুলের বাড়তি পরিচর্যা। তিনি আশা করেন গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি জানান, সারা বছরই সব ধরনের ফুলের কমবেশি বাজার পাওয়া যায়। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুলের বাজার বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে প্রস্তুতি থাকে অনেক বেশি। অনান্য মাসে গাঁদা ফুল বিক্রি হয় ১২০ টাকা ঝুপা, সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয় ২২০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে সব ধররেন ফুলের বাজার তিন গুণ বেড়ে যায়। এবারও ফুলের বাজার অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি যাবে বলে ধারণা তার।
ঝিনাইদহের গান্না বাজার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী দাউদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, গান্না বাজারে সামনের দিনগুলোতে প্রতিদিন ৫০-৬০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে। বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধাসহ নানা রঙের ফুল ও তার গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। ফুলের কড়ি ধরে রাখতে আর ফলন ভালো পেতে বাগানগুলো বাড়তি যত্নে রাখা হয়েছে ।
কোটচাঁদপুর উপজেলা থেকে ফুল বিক্রি করতে আসা নজরুল আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, এ বছর ফুলের বাজার অনেক ভালো। এমন বাজার থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে সকল খরচ বাদ দিয়ে ৩ লাখ টাকা করে লাভ হবে।
ঝিনাইদহ ফুলচাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জামির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ফুলের দাম অনেক ভালো। সামনের দিনে আরও ভালো হবে। এ মাসে প্রায় শত কোটি টাকার ফুল ঝিনাইদহ থেকে ছড়িয়ে পড়বে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে।
তিনি জানান, বর্তমান বাজারে পাইকারিতে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩ টাকা পিস, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা পিস, গাঁদা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ঝুপা, গ্লাডিওলাস ১০ থেকে ১৫ টাকা পিস, রজনীগন্ধা ৮ থেকে ১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার আগামীতে আরও বাড়তে পারে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফলন ভালো পেতে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। এ বছর সমগ্র জেলায় ফুলের চাষ হয়েছে ২৫৪ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৮ হেক্টর।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহের ফুল অন্য জেলার ফুলের তুলনায় অনেক মানসম্মত হওয়ায় এই ফুলের চাহিদ অনেক বেশি। ঝিনাইদহে গাঁদা ফুলের চাষটা বেশি হয়, যার কারণে প্রতিটা জেলার গাঁদা ফুলের চাহিদা এখান থেকেই মেটানো হয়। এই ফুলের মানটা ভালো হওয়ায় অনেক দিন ধরে সংক্ষরণ করা যায়। জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও সদর উপজেলার প্রায় ১০টি বাজার থেকে প্রতিদিন এ ফুল ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বাংলাদেশে।
সূত্র : ঢাকা পোষ্ট
Leave a Reply