আমাদের বাংলাদেশে পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় শাক। বাংলাদেশের প্রতিটি হাট-বাজারে প্রায় সারাবছরই পুঁইশাক পাওয়া যায়। সহজলভ্য হওয়ায় এই শাক সবার কাছে প্রিয়। অন্যদিকে এ শাকের পুষ্টিগুণও অনেক। সাধারণত সাদা ও লাল এই দুই ধরনের পুঁইশাক আমাদের দেশে পাওয়া যায়।
বলা হয়ে থাকে শাক জাতীয় তরকারির মধ্যে পুঁইশাক হলো সবার সেরা। পুঁইশাক খুব সুস্বাদু। আমাদের দেশে প্রায় সব স্থানেই পুঁইশাকের চাষ করা হয়। শহরের বাড়ির ছাদ কিংবা ব্যালকনিতেও খুব সহজে এর চাষ করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে পুঁইশাক চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
পুঁইশাকের দুটি জাত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে,- লাল পুঁইশাক। এর পাতা ও কাণ্ড লালচে রঙের। অন্য জাতের নাম সবুজ পুঁইশাক। এর পাতা ও কাণ্ড সবুজ।
চাষ পদ্ধতিঃ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে পুঁইশাক জন্মে। বাংলদেশের প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ও চাষের উপযোগি সব জায়গায় পুঁইশাক চাষ করা যায়। তবে পুঁইশাক বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে এবং গরম, আর্দ্র আবহাওয়া ও রোদেলা স্থানে সবচেয়ে ভালো হয়। কম তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কম হয়।
তাই বাণিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষের ক্ষেত্রে দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
জমি তৈরি ও বীজ বা চারা বপন
* উত্তমরূপে আগাছা পরিস্কার করতে হবে।
* পুঁইশাকের চাশাবাদের জন্য ৫- ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির তৈরি করতে হবে।
* বীজ সারি করে বপন করা যায়।
* এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা বপন করতে হয়।
* চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়।
* চারা বপনের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার।
* বীজ বপনের সময় ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ (বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়)।
* কখনও কখনও বেডে চারা তৈরি করা হয়।
* ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ বোনা যায়।
* সারিতে বোনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫-২.৫ কেজি বীজ লাগে ( তবে ছিটিয়ে বোনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে)।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
পুঁইশাক চাষে প্রতি শতক সারের পরিমান হল…
* ৬০ কেজি গোবর সার,
* সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম,
* ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া,
* টিএসপি ৪০০ গ্রাম,
* এমও পি ৪০০ গ্রাম।
জমি তৈরির সময় ইউরিয়া ছাড়া সব সার ( গোবর ও টিএসপির অর্ধেক জমি তৈরীর সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে ) প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া, চারার বয়স ১০-১২ হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ফলনঃ পুঁইশাকের ফলন প্রতি শতকে ৭০ থেকে ১১০ কেজি, হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টন। লাল রঙের জাত মনীষা বীজ বপনের ৪০-৫০ দিন পই তোলা শুরু করা যায়।
আর সবুজ রঙের জাতের মধ্যে ভাল বারি পুইশাক । এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি ৩৫-৪৫ টন সবুজ রঙের অন্যান্য জাত হল মাধুরী ও রূপসা গ্রীন।
ফসল সংগ্রহঃ পুঁই গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হয়। এতে শাকও খাওয়া হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বেরোয়। একবার চারা লাগিয়ে ১০ থেকে ১২ বার পুঁইশাক সংগ্রহ করা যায়।
Leave a Reply