লাউ আমাদের দেশে একটি অন্যতম সুস্বাদু সবজি। লাউ সব ধরণের মাটিতে জন্মে। সাধারণত লাউ শীতকালে চাষ করা হয়ে থাকে। লাউয়ের পাতা নরম ও সবুজ বিধায় পাতা ও ডগা শাক হিসাবে এবং লাউ ভাজি ও তরকারী রান্না করে খাওয়া হয়। লাউয়ের চেয়ে এর শাক পুষ্টিকর বেশি। লাউ লতানো উদ্ভিদ তাই সারা বছরই চারা লাগিয় চাষ করা যায়। লাউ বীজ রোপণ করার আগে খেয়াল করে দেখে নিতে হবে আপনার এলাকায় কোন লাউ, লম্বা না গোল লাউ চাহিদা বেশি? যে লাউয়ের চাহিদা বেশি সেই লাউ চাষ করতে হবে।
জমি তৈরি ও চারা রোপন, জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি
মাটি : জৈব পদার্থ এঁটেল দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য ভাল হয়।
জলবায়ু: আমাদের দেশে লাউ চাষের জন্য উপযোগী মৌসুম হলো শীতকাল। বেশি গরমও না
আবার বেশি শীতও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য ভাল।
বীজ গজানোর পর চারার বয়স যখন ১৬-১৭ দিন হবে তখন চারা মাঠে লাগানো উত্তম।
মাদা তৈরি এবং বেডে মাদা হতে মাদার দুরত্ব:
অবশ্যই মাদার মাটি ঢলো চুন দিয়ে শোধন করে নিতে হবে, মাদা প্রতি ১০০ গ্রাম
মাদা দূরত্ব মাদা থেকে মাদা ৬,হাত বাই ৭ হাত
মাদা গর্ত ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ দিগ ১ হাত বাই ১ হাত
বীজ বপনঃ লাউ চাষের জন্য পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। স্বাভাবিকভাবে আলো বাতাস থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। বেড ২০-২৫ সেমি উঁচু করতে হবে
বীজ বপনের জন্য ৮*১০ সেমি আকারের পলিব্যাগ দরকার। অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে বা এক তৃতীয়াংশ কম্পেষ্ট সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। বীজ গজানোর জন্য মাটির জো ঠিক রাখতে হবে। মাটিতে জো না থাকলে পানি দিয়ে জো করে নিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে
লাউয়ের বীজের খোসা কিছুটা শক্ত বধিায় অংকুরোদগম হতে সময় লাগে। সহজে অংকুরোদগমের জন্য পরিস্কার পানিতে ১৫-২০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা শতকরা ১% পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে একরাত ভিজিয়ে তারপর পলিব্যাগে বীজ বপন হবে
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগঃ
* দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা লাউ গাছ ফলন পাওয়া যায় লম্বা সময়কাল ধরে। এ জন্য লাউয়ের চাষা সফলতা পেতে গাছের জন্য
পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চির করতে হবে।
* লাউ চাষের জন্য জমি তৈরির সময় সারের যে মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে গোবর চাষের পর এবং টিএসপি,
এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
* মাদায় চারা রোপণের যে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে তা দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে
দিতে হবে।
* তারপর ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।
চারার পরিচর্যা, সঠিক সময়ে সেচ দেয়াঃ লাউ গাছের প্রচুর পরিমানে পানি প্রয়োজন হয়। লাউ গাছের প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে ফল ধারণ ব্যাহত হয় এবং ফল আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য নালার মাধ্যমে গাছের প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। নালায় পানি দিয়ে জমিয়ে রাখলে গাছ তার প্রয়োজন মতো পানি টেনে নিবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ গাছে ৪-৫ দিন পরপর সেচ দিতে হয়।
লাউ গাছের পরিচর্যা, লাউ গাছের শোষক শাখা অপসারণঃ লাউ গাছের গোড়ার দিকে যে ছোট ছোট ডগা বের হয় সে গুলোকে শোষক শাখা বলে। এসকল শাখা গুলো গাছের ফলন ও গাছ বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাড়ায়। গাছের গোড়ার দিকের ৪০-৪৫ সে.মি. পর্যন্ত সবগুলো শোষক শাখা কেটে ফেলতে হবে।
মালচিং ও বাউনি দেয়াঃ মালচ অর্থ মাটি ঢেকে দেওয়া, আর মালচিং হলো মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা। মাটির রস ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে গাছের গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়াকে মালচিং বলে।
ফলন ও ফসল তোলাঃ সঠিক ভাবে যত্ন নিয়ে লাউ চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ টন এবং প্রতি বিঘায় ৪.৫-৫টন ফলন পাওয়া যায় এবং সেই সাথে প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি পর্যন্ত বীজও উৎপাদন করা যায়।
লাউয়ের পরিপক্কতা সনাক্তকরণ করার উপায়-
পরিপক্ক লাউয়ের গায়ে প্রচুর শুং থাকবে।
লাউয়ের গায়ে নখ দিয়ে হালকা চাপ দিলে খুব সহজেই নখ ডেবে যাবে।
লাউয়ের পরাগায়নের ১২-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়
একই জমিতে বার বার একই ফসলের চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে।
Leave a Reply