করলা কুমড়া পরিবারভূক্ত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও বাংলাদেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। এর রস বহুমুত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
জাতের বৈশিষ্ট্য : বারি করলা-১ : বারি করলা-১ জাতটিতে গাঢ় সবুজ রংয়ের ২৫-৩০টি ফল ধরে (গাছ প্রতি)।
প্রতি ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম যা লম্বায় ১৭-২০ সেমি এবং ব্যাস ৪-৫ সেমি।
এ জাতটি ছাড়াও স্থানীয় সহজলভ্য জাতের চাষ হচ্ছে তারমধ্যে টিয়া ও গজ করলা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মাটি : জল জমেনা এ ধরনের প্রায় সব রকমের মাটিতেই করলার চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি করলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জলবায়ু : বাংলাদেশের আবহাওয়া করলা চাষের জন্য উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভালো জন্মে। তবে ফুল আসার সময় অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে ফল ধরা ব্যাহত হয়।
জমি তৈরি :
খরিফ মৌসুমে চাষ হয় বলে করলার জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমার সম্ভবনা নেই। বসতবাড়িতে করলার চাষ করতে হলে দু’চারটি মাদায় বীজ বুনে গাছ বেয়ে উঠতে পারে এমন ব্যবস্থা করলেই হয়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য প্রথমে সম্পূর্ণ জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হয় যাতে শিকড় সহজেই ছড়াতে পারে। জমি বড় হলে নিদিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে লম্বায় কয়েক ভাগে ভাগ করে নিতে হয়। বেডের প্রশ্বস্ততা হবে ১.০ মিটার এবং দু’বেডের মাঝে ৩০ সেমি নালা থাকবে।
উৎপাদন সময়কাল: ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্র্বত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।
সার ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের সব অঞ্চলের জন্য মাটি পরীক্ষা সাপেক্ষে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয় নাই। কাজেই যে সব অঞ্চলের জন্য সারের মাত্রা নির্দিষ্ট নেই সেসব অঞ্চলের জন্য পরীক্ষা মূলক প্রমানের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত হারে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হলো।
সারের নাম মোট সারের পরিমাণ জমি ও মাদা তৈরির সময় দেয়
হেক্টরে শতাংশে হেক্টরে শতাংশে
পঁচা গোবর ১০ টন ৮০ কেজি সব ৪০ কেজি
ইউরিয়া ১৫০ কেজি ৭০০ গ্রাম – –
টিএসপি ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম সব ৩৫০ গ্রাম
এমওপি ১৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম ৫০ কেজি ২০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০ কেজি ৪০০ গ্রাম সব ৪০০ গ্রাম
জিংক অক্সইড ১০কেজি ৫০ গ্রাম সব ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৮ কেজি ৪০ গ্রাম – ৪০ গ্রাম
ম্যাগনোসিয়াম অক্সাইড ১০ কেজি ৫০ গ্রাম – –
সারের নাম চারা রোপনের ২০ দিন পর চারা রোপনের ৪০ দিন পর চারা রোপনের ৬০ দিন পর
হেক্টারে শতাংশে হেক্টারে শতাংশে হেক্টারে শতাংশে
ইউরিয়া ৫০ কেজি ১০ গ্রাম ৫০ কেজি ১০ গ্রাম ৫০ কেজি ১০ গ্রাম
এমওপি ৪০ কেজি ২০ গ্রাম ৩০ কেজি ১০ গ্রাম ৩০ কেজি –
ফসল সংগ্রহ: চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় প্রায় ২ মাস লেগে যায়। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।
Leave a Reply