বরবটি একটি জনপ্রিয় সবজি। এই সবজি বর্তমানে বার মাসই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের কৃষকেরা উন্নত জাতের বরবটি চাষ করে যেমন তাদের চাহিদা মিটাতে পারেন, তেমনি আবার বাজারে বিক্রয় করে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে। বরবটি আমিষসমৃদ্ধ একটি সবজি।
প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটির চাষাবাদ হলেও দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম।বরবটি সাধারণত খরিফ মরসুমে ভাল হয়। অপেক্ষাকৃত খরিপ তথা গ্রীষ্ম মৌসুমে (মার্চ-সেপ্টেম্বর) বরবটির ভালো ফলন হলেও, খুব শীতে তেমন ভালো হয় না।ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসে বরবটির বীজ বোনার উপযুক্ত সময়, শীতকালে বরবটির বীজ বপন করা উচিত নয়।
জমি ও মাটিঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতে বরবটি চাষ হলেও দোঁয়াশ মাটিই ভাল। সামান্য অম্ল মাটিতে এই চাষ হলেও ক্ষার মাটিতে ভাল বাড়ে না। মাটিতে উপযুক্ত পরিমাণে জৈব সার এবং পাতাপচা সার ব্যবহার করা দরকার। জলনিকাশি নালা তৈরি করতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় জল না জমে।
জমি তৈরিঃ বীজ বোনার আগে জমিতে ৩-৪টি চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও মোলায়েম করে নিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৩-৫ কেজি পচা ঝুরঝুরে গোবর সার, ৭৫ গ্রাম এসএসপি, ১০০ গ্রাম নিমখোল দিয়ে ভাল ভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।
বীজ বোনাঃ পশু খাদ্য বা সবুজ সারের জন্য বরবটি চাষ করলে বীজ হাতে ছিটিয়ে বোনা যায়। তবে সব্জি হিসাবে চাষ করলে সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫ মিটার। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ ফুট। বোনার আগে বীজগুলো ভাল ভাবে শোধন করে নিতে হবে। এর জন্য কার্বেন্ডাজিম ৫০% ডব্লুপি এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে তাতে বীজগুলি আধ-এক ঘণ্টা ডুবিয়ে রেখে জমিতে বুনতে হবে। তারপর প্রয়োজন মতো জলসেচ দিতে হবে।
তবে বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য সারিতে বুনতে হবে।
* সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫ মিটার।
* গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ ফুট।
* জাত হিসেবে সারির দূরত্ব ১ মিটার বাড়ানো বা কমানো যায়।
বরবটি চাষের জন্য শতাংশ ১০০-১২৫ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। তবে বপনের আগে বীজ ভাল ভাবে শোধন করে নিতে হবে; প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ এই জাতীয় ফসলে নাইট্রোজেনঘটিত সার কম প্রয়োগ করা হয়। কারণ এরা পরিবেশের নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ করে। চারার উচ্চতা ১৫-২০ সেমি হলে মাচা দিতে হবে।
বরবটির ভালো ফলন পাওয়া জন্য মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে জমিতে সার প্রয়োগ করা দরকার।
তবে মাটির গুণগতমান পরীক্ষা করে পরিবেশ এবং মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সব সময় জৈব সার ব্যবহার করা উচিত ।
এছাড়া টিএসপি সম্পূর্ণ পরিমাণ ও অর্ধেক এমওপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। সারের পরিমাণ ( প্রতি শতকে)…
ইউরিয়া – ১০০ গ্রাম
টি এস পি- ৯০ গ্রাম
এমওপি- ৭৫ গ্রাম
গোবর- ২০ কেজি
বীজ বপনের পর ২০ দিন পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
বরবটির চাষাবাদে ইউরিয়া সার ব্যবহার কম করতে হয়। ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছ ঝোপালো হয় ও ফলন কম হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য গোবর সার, জিপসাম সার, জিংক সালফেট সার ও বোরক্স সার দিতে পারেন।
পরিচর্যা
বরবটি গাছ বড় হলে মাচা বা বাউনি দেওয়ার পাশাপাশি গাছের চারপাশ আগাছমুক্ত রাখতে হবে।এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে সবসময় সেচ দিতে হবে।
অপরদিকে সেচ বা বৃষ্টির পানি যাতে বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃবরবটি বীজ বপনের ৫০- ৬০ দিন পর ফসল আসে। কচি বরবটি সংগ্রহ করতে হয়, বেশি পুষ্ট হলে সব্জি হিসাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। শতক প্রতি বরবটি ফলন ৩০-৬০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন হয়ে থাকে।
Leave a Reply