1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
পরিতোষ মালো বানান ৩১ ধরনের কৃষিযন্ত্র, এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণও হচ্ছে তাঁর তৈরি ব্লোয়ারে
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

পরিতোষ মালো বানান ৩১ ধরনের কৃষিযন্ত্র, এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণও হচ্ছে তাঁর তৈরি ব্লোয়ারে

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬৮ পড়া হয়েছে

ফরিদপুরের ছেলে পরিতোষ মালো ১৯৯৭ সালে মায়ের জমানো ২৫ হাজার ও মামার কাছ থেকে ধার করা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আর কে মেটাল নামের একটি ঝালাই কারখানা স্থাপন করেন। পরে তিনি আধুনিক কৃষিযন্ত্র তৈরি শুরু করেন।

পেঁয়াজ সংরক্ষণ নিয়ে প্রতিবছরই কমবেশি সমস্যায় পড়েন দেশের পেঁয়াজচাষিরা। তাঁদের উৎপাদিত অনেক পেঁয়াজ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তবে আগের তুলনায় এ হার কমেছে। কারণ, চাষিদের অনেকেই এখন পেঁয়াজ সংরক্ষণ যন্ত্র (ব্লোয়ার) ব্যবহার করছেন। পেঁয়াজচাষিদের মধ্যে সুলভ মূল্যে এই যন্ত্র বিক্রি করছে আর কে মেটাল নামে ফরিদপুরের একটি প্রতিষ্ঠান।

১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা দামে একেকটি ব্লোয়ার যন্ত্র কিনে কৃষকেরা এখন নিজেদের বাসাতেই ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারছেন। শুধু পেঁয়াজ সংরক্ষণই নয়, মাঠ থেকে পেঁয়াজ কাটা, ফসল মাড়াই, বীজ বপন, ঘাস কাটা, সেচ দেওয়া প্রভৃতি কাজে ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন যন্ত্রও তৈরি করে আর কে মেটাল। স্থানীয় চাহিদার অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৩১ ধরনের আধুনিক কৃষিযন্ত্র তৈরি ও বিপণন করেছে। এসব যন্ত্র অনেকটা সুলভ মূল্যেই বিক্রি করা হয় বলে দাবি তাঁদের।

আর কে মেটালের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান পরিতোষ মালো (৪৯)। এই উদ্যোক্তা ফরিদপুর শহরের হাবেলি গোপালপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তবে অন্য অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মতো পরিতোষের পথচলাও মসৃণ ছিল না। মৎস্যজীবী পরিবারের এই ছেলে নিজের চেষ্টায় ধীরে ধীরে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা স্থানীয় একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ট্রেডে ভর্তি হন পরিতোষ। সেখানে দুই বছরের প্রশিক্ষণে ওয়েল্ডিংসহ বেশ কিছু কাজ শেখেন তিনি। এর মধ্যেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিকের পড়াশোনাও শেষ করেন।

পরিতোষ ১৯৯৭ সালে মায়ের জমানো ২৫ হাজার টাকা ও মামার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে একটি ওয়েল্ডিং (ঝালাই) কারখানা স্থাপন করেন। তিনি জানান, আসলে কারখানা বলতে শহরের টেপাখোলা এলাকায় নির্বাচন কার্যালয়ের পাশে টিনের একটি ছোট ঘরে চলত কাজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে ঘুরে কাজ সংগ্রহ করতেন তিনি। এভাবেই ধীরে ধীরে ব্যবসায়ের পরিসর বাড়ে।

পরিতোষ মালোর জীবনে বাঁকবদল ঘটে ২০০০ সালের দিকে। ওই সময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক প্রকল্পের আওতায় একটি ব্রিটিশ উন্নয়ন সংস্থায় টেকনিশিয়ান হিসেবে যুক্ত হন তিনি। সেখানে বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ শেখেন। এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বছরখানেক পরে ফরিদপুরে নিজের কারখানায় বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি বানাতে শুরু করেন। এ কাজে তাঁকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা সহায়তা করেন।

পরে ফরিদপুর শহরের হাবেলি গোপালপুর এলাকায় ৫ শতাংশ জমিতে আর কে মেটালের কারখানা (ওয়ার্কশপ) গড়ে তোলেন। এই কারখানার তাঁর তৈরি পণ্যের চাহিদা ও কাজের পরিধি বেশ বেড়েছে। সে জন্য জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের মহারাজপুরে ৫০ শতাংশ জমিতে আরেকটি কারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। তবে সেখানে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।

যেসব কৃষিযন্ত্র তৈরি করেন

পরিতোষ মালো জানান, ‘বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রের। এ সময় সনাতনী পদ্ধতিতে কাজ করলে আমাদের পিছিয়ে থাকতে হবে। আবার মানুষের বিপুল চাহিদা অনুসারে পণ্যের জোগান দিতে গেলেও যন্ত্রের মাধ্যমে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিকল্প নেই। এসব দিক চিন্তা করেই দেশীয় পরিবেশের উপযোগী আধুনিক কৃষিযন্ত্র বানানোর দিকে মনোনিবেশ করি। তা ছাড়া এ খাতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাও আমাকে উৎসাহিত করেছে।’

বর্তমানে ইঞ্জিন ও বৈদ্যুতিক মোটরনির্ভর ৩১ ধরনের আধুনিক কৃষিযন্ত্র বানাচ্ছেন পরিতোষ। এর মধ্যে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, ধনিয়া প্রভৃতি ফসল মাড়াইয়ের যন্ত্র; ফসলের খেতে চাষ ও মই দেওয়া এবং বীজ বপনের যন্ত্র; খড় ও ঘাস কাটার যন্ত্র, পেঁয়াজ কাটার যন্ত্র; পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্লোয়ার যন্ত্র প্রভৃতি। এর মধ্যে কিছু পুরোনো যন্ত্রের আধুনিকায়ন করেছেন তিনি। আবার নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানিয়েছেন দু-তিনটি নতুন যন্ত্র। যেমন পুরোনো পদ্ধতির অনেক কৃষিযন্ত্রকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে ঠেলা-ধাক্কার প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে তিনি যন্ত্রের সঙ্গে ইঞ্জিন চালিত পরিবহনব্যবস্থা যুক্ত করেছেন।

পরিতোষ মালো জানান, যন্ত্র তৈরিতে তিনি গবেষণা ও উন্নয়নকে (আরঅ্যান্ডডি) সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা ও প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে কৃষকেরা খুব উপকৃত হচ্ছেন। যেমন আর কে মেটালের তৈরি মাড়াই যন্ত্রের মাধ্যমে ফসল মাড়াইয়ের পাশাপাশি ঝাড়া ও বাছাইয়ের কাজও করা সম্ভব হচ্ছে। এতে এক ঘণ্টায় এক থেকে দেড় হাজার কেজি ধান বা গম মাড়াই করা যায়।

ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয় আর কে মেটালের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পরিতোষ মালো বলেন, একেক এলাকায় একেক যন্ত্রের চাহিদা বেশি। যেমন পাবনা ও ফরিদপুরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ যন্ত্রের বিক্রি বেশি। মৌসুমভেদে বছরে সব মিলিয়ে ৮০০-৯০০টি কৃষিযন্ত্র বিক্রি হয়। এসব যন্ত্রের দাম সর্বনিম্ন দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। যন্ত্র বিক্রি করে বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়।

আর কে মেটালের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন পরিতোষের স্ত্রী পলি রানী মালো। তাঁদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিয়মিত কর্মী ১৫ জন। যদিও করোনার আগে কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৫। ওই সময় আর্থিক সমস্যার কারণে জনবল কমাতে বাধ্য হন তাঁরা। তবে সম্প্রতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন বলে জানান পরিতোষ। তিনি বলেন, নতুন কারখানাটি চালু হলে সেখানে শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে।

পরিতোষ মালো বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রয়োজন। বর্তমান আর্থিক সংকটের এ সময়ে এটি আরও বেশি আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের যদি এককালীন ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যায় এবং এর বিপরীতে সুদ গ্রহণ এক বছর পর থেকে শুরু করা গেলে তাঁরা উপকৃত হবেন।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD