1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
আগাম আলু চাষে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩২ অপরাহ্ন

আগাম আলু চাষে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১৯ পড়া হয়েছে

দিনাজপুরে শুরু হয়েছে আগাম আলু চাষ। কিন্তু আলুর বীজ, সার, কীটনাশক ও মজুরের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তারপরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বল্পমেয়াদী আগাম আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতে আলুর জন্য হালচাষ, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ ও বপনে ব্যস্ত সবাই।

দিনাজপুর জেলায় এবার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে আলুর বীজ ও সার নিয়ে বিপাকে আছেন চাষিরা। সরকারি দামের থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বীজ ও সার।

জানা যায়, এবার সরকারি যে আলুর বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে; সেই আলুর বীজ জাতভেদে ৫৭ টাকা থেকে শুরু করে ৬৬ টাকা পর্যন্ত কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরকারি বীজ অপ্রতুল। সূত্র জানায়, ২০-২৫ শতাংশ আলুর বীজ উৎপাদন করে বিএডিসি। বাকি আলু কৃষক তাদের ঘরে রাখেন ও বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও ও প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে। সরকারি আলুবীজ পর্যাপ্ত না হওয়ায় কৃষক বাধ্য হয়ে বেশি দামে আলুবীজ কিনে থাকেন। গত বছর যে আলুবীজ ৫০-৬০ টাকায় কিনতে পেরেছিল কৃষক। সেই আলুবীজ এবার ৮০-৮৫ টাকা পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে।

সারের বিষয়ে জানা যায়, ডিলাররা ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকায় কেনে কিন্তু বিক্রি করেন ১৩৫০ টাকায়। ডাই-অ্যামনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সরকারি মূল্য ৯৫০ টাকা হলেও বিক্রি হয় ১০৫০ টাকায়। মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সরকারি মূল্য ৯০০ টাকা হলে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইউরিয়া সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকা হলেও ১৩৫০ টাকায় চাষি পর্যায়ে বিক্রি করবেন।

কিন্তু কৃষককে তিউনেশিয়ার ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ১৭০০ টাকা এবং দেশি ২২০০ টাকা, ডাই-অ্যামনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) মরক্কো ১১০০ টাকা ও দেশি ১৫০০ টাকা, মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) কানাডা ১২০০ টাকা ও রাশিয়া সরকারি মূল্যেই কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া কোনো ডিলারই ভাউচার দিচ্ছেন না। ভাউচার চাইলে সার দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। তবে ইউরিয়া সার সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

এ ছাড়া কৃষক আলুর জমিতে গোবর সার, মিশ্রসার, জিপসাম, জিংক বা দস্তা, ম্যাগনেশিয়াম ও বোরন সার ব্যবহার করে থাকেন। চলতি মাসে দিনাজপুর জেলায় আলু চাষের জন্য টিএসপি ২ হাজার ৬৮৯ মেট্রিক টন, ডিএপি ৪ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন ও এমওপি ৩ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকার সার দিয়ে আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করেছেন কৃষকেরা। জমি তৈরি করে বীজ আলু জমিতে লাইন ধরে রোপণ করছেন। ১ একর জমিতে ২৫ থেকে ২৮ মণ বীজ আলুর প্রয়োজন হয়। তবে একরপ্রতি ১৪০-১৫০ মণ আলুর ফলন হয়। বীজ লাগানোর ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলেন। অগ্রহায়ণ মাসে আলু চাষের মৌসুম হলেও বেশি দাম পাওয়ার আশায় আশ্বিন মাসেই আগাম আলু চাষ করছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জুয়েল ইসলাম, মোকছেদ আলী, আব্দুর রাজ্জাক, আবু সায়েম জানান, এবার আগাম আলু চাষে তাদের হালচাষ, সার, বীজ, শ্রমিক, কীটনাশক সব কিছুতে দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে। এতে তাদের আলু উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এবার ১ একর আলু চাষ করতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। কাজে আলুর দাম বেশি না হলে তাদের আগাম আলু চাষ করে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

তারা বলেন, ‘ডিলাররা সার সরকারি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। আবার রশিদ চাইলে সার নেই বলে ফেরত দেন। তাই বাধ্য হয়েই রশিদ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে সার কিনছি।’

কৃষক জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘কৃষক ক্ষেতে ফসল ফলাতে ব্যস্ত। কৃষকের কোনো সংগঠন নেই। দাবি জানানোর উপায় নেই। কৃষি কর্মকর্তা বা যারা মাঠে থাকার কথা; সেই এএসওদের কোনো দিন মাঠে দেখি না। অথচ বালাইনাশক কোম্পানির লোকেরা মাঠে কৃষকের কাছে ঘুরপাক খাচ্ছেন। তাই কৃষক সব সময় ঠকে আসছে। আগাম আলু যদি কমপক্ষে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করতে পারে কৃষক। তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারবেন।’

আলু চাষি মাওলানা এমদাদুল হক জানান, কয়েক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। তবে দাম বেশি পাওয়ার আশায় আগাম আলুর চাষ করছেন। প্রতি বছর নতুন আলু ১০০ টাকার উপরে দাম পাওয়া যায়। তিনি তার উৎপাদিত আলু স্থানীয় বাজারসহ রাজধানীতে পাঠান। আশা করছেন এবারও ভালো দাম পাবেন।

বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, আগাম আলু লাগানো নিয়ে এক প্রকার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। যার আলু যত আগে উঠবে, সেই কৃষক তত বেশি ভালো দামে বিক্রি করবেন। মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর চাহিদা থাকে প্রচুর। ভোক্তার কাছে আগাম দিতে পারলে চড়া বাজারমূল্য পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন।

খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগাম জাতের আলু উৎপাদন করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। অন্য ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাপক অবদান রাখে আগাম আলু। তাই আগাম আলু চাষ করি।’

এ ব্যাপরে জানতে একাধিক ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক নেতা বলেন, ‘বরাদ্দকৃত বীজআলু ও সারের বিপরীতে পে-অর্ডার করতে হয়। এরপর সার গোডাউন থেকে তুলতে গেলে কর্মকর্তার নির্দেশে বস্তাপ্রতি নির্দিষ্ট হারে অতিরিক্ত টাকা উৎকোচ বা সালামি গুনতে হয়।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নাম বলতে চাই না। একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যে কারণে এই আলুর বীজ ও সার বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। ইচ্ছে করলেও কেউ একা কিছু করতে পারে না। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছেও অভিযোগ হয়েছিল কিন্তু কোনো ফল হয়নি। আগের থেকে বীজ আলুর বরাদ্দ কমে গেছে। ঢাকায় বসে বরাদ্দ ঠিক করা হয়। আর খেলাটা হয় সেখান থেকেই।’

আরেক ডিলার বলেন, ‘বিএডিসি বীজ আলুর মূল্যবৃদ্ধির জন্য ঢাকাতে এসি রুমে বসা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোষারোপ করছেন ডিলাররা। কারণ হিসেবে তারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে বীজ আলু শিফটিং করা। দিনাজপুর অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও দিনাজপুর অঞ্চলে উৎপাদিত বীজ আলু শিফটিং করে অন্য হিমাগারে নেওয়া হয়। এ বছর দিনাজপুর অঞ্চলের ডিলারের মাঝে যে পরিমাণ বীজ-আলু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার সিংহভাগ বীজ আলু বিএডিসির কাশিমপুর, মধুপুর, কুড়িগ্রাম ও রংপুর হিমাগার থেকে নিতে হচ্ছে। এতে বেড়েছে পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ। অথচ বিএডিসির দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় হিমাগারে বীজ আলুর বরাদ্দ দেওয়া হলে কমে আসতো পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ।

তারা আরও জানান, দিনাজপুর অঞ্চলের এই হিমাগরগুলোতে রাখা বীজ আলু বাইরের জেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ডিলারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে হয়রানিমূলক নতুন নিয়ম। সেই কারণে এস্টারিক্স জাতের বীজ আলুর জন্য প্রায় দেড় মাস আগে টাকা জমা দিতে হয়েছে ডিলারদের। এতে ডিলারদের অতিরিক্ত সময় ব্যাংক ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে। তা পুষিয়ে নিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বীজ আলু বেশি দামে বিক্রি করছেন ডিলাররা। একই নিয়মের কারণে বীজ আলু নির্দিষ্ট সময় পরে কৌশলে চলে যাচ্ছে অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু ডিলারের দোকানে। সেই ডিলারেরা অতিরিক্ত দামে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন বীজ আলু।

সার বরাদ্দ ও বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি জানতে চাইলে যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. শওকত আলী বলেন, ‘সার সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি সঠিক নয়। আমার গোডাউন থেকে বরাদ্দকৃত সার নিতে ডিলারদের কাছে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বীজ আলুর ব্যাপরে জানতে উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদের (বীজ বিপণন) মোবাইল ফোন নাম্বারে গত দুইদিন কল করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া তালিকা অনুয়ায়ী দিনাজপুরে ৪৭ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হবে। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হবে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ হয়ে গেছে। কয়েকদিনে মধ্যে আগাম আলু বীজ রোপণ শেষ হয়ে যাবে।
সার ও বীজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এরকম খবর বা অভিযোগ তিনি পাননি। তবে তিনি জানান, যদি বেশি দামে সার বিক্রি হয়ে থাকে তাহলে তিনি খবর নিয়ে তদন্ত করে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সার বিক্রি করলে ক্যাশ মেমো দিতে হবে। যদি না দিয়ে থাকে, তা অন্যায়।’

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD