1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
আলু, পেঁয়াজ, সবজি—কম দামে কেনার পেছনের গল্পটা...
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

আলু, পেঁয়াজ, সবজি—কম দামে কেনার পেছনের গল্পটা…

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২১ পড়া হয়েছে

সম্প্রতি যশোর ও ঝিনাইদহের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্র আর প্রান্তের মধ্যে চিন্তার ব্যবধানটা চোখে পড়েছে। ঢাকায় কান পাতলেই সংস্কার, নির্বাচন, সংবিধান সভা, প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য—এ রকম শব্দ কানে আসে। গ্রামে রাজনীতি নিয়ে যাঁরা আগ্রহী, তাঁদের একটাই প্রশ্ন, নির্বাচন কি হবে, কবে হবে? তবে বেশির ভাগেরই মূল চিন্তা ফসলের দাম নিয়ে। আবহাওয়া এবার ফসলের অনুকূলে।

পেঁয়াজ, শীতের সবজি, আলু—তিন ফসলে সাধ্যের চেয়ে বেশি ফলন ফলিয়েছেন কৃষক। কিন্তু তার পুরস্কারটা এতটা কঠোর হবে, তা কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন কেউ? লাভ (যদিও এখানে শুভংকরের ফাঁকি আছে। কেননা, কৃষকের শ্রমের দাম এখানে যুক্ত হয় না) তো দূরে থাক, ফসল ফলানোর যে দাম, তা–ই ওঠাতে পারেননি বেশির ভাগ কৃষক।

কয়েক দিন আগে রাজশাহীর আড়ানী রেলস্টেশনে মীর রুহুল আমিন নামের ৭০ বছর বয়সী এক পেঁয়াজচাষি আত্মহত্যা করেছেন। দুই রেললাইনের মাঝে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রেন আসামাত্রই লাইনে শুয়ে পড়েন। এ আত্মহত্যার ভিডিও ভাইরাল হয়। কেউ একজন এই আত্মহত্যা নিয়ে মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে দেন। পরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে রূঢ় এক বাস্তবতা।
জমি বর্গা নিয়ে এক বিঘা পাঁচ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন মীর রুহুল আমিন। স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৬৪ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা ঋণ অবশিষ্ট রয়েছে। ওই ঋণের কিস্তি চালানোর জন্য স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনের কাছ থেকেও হয়তো ঋণ করেছিলেন। পেঁয়াজের দাম কম। তাই ঋণ শোধ করার দুশ্চিন্তায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।

মেহেরপুরের মুজিবনগরে এনজিও ও সারের দোকান থেকে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করা কৃষক সাইফুল শেখ বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। ৬০০ টাকা মণে তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই পেঁয়াজের দাম এখন ২০০০ টাকা মণ। তাঁর মেয়ের প্রশ্ন, ‘কৃষক আত্মহত্যা করলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা’?

রুহুল আমিন ও সাইফুল শেখের এই ঋণ-কিস্তির গল্প কান পাতলেই দেশজুড়ে গ্রামগুলোয় শোনা যাবে। কৃষকেরা স্রেফ কৃষির প্রতি, ফসলের প্রতি ভালোবাসার টানেই এখনো চাষ করেন ও ফসল ফলান। এবারে এই যে ক্ষতি হলো, তা তাঁরা কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে? কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষ করে উৎপাদনের খরচ উঠাতে পারলেন না।
চার মাস ধরে কৃষকেরা যে অবর্ণনীয় লোকসানের ঘূর্ণিপাকে আছেন, তা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা আছে? কৃষিতে কোনো নেতৃত্ব আছে কিনা, সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ফলে কৃষক ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়লে কার কীই-বা আসে-যায়।
কিন্তু ট্র্যাজেডির ব্যাপার হলো, তাঁদের গোলা পেঁয়াজশূন্য হলো আর বাজারে সেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে দ্বিগুণ হলো। মানে, যাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে পানির দামে পেঁয়াজ কিনে মজুত করেছিলেন, তাঁদের ব্যাংকে এখন ‘হাঁস সোনার ডিম’ দিতে শুরু করে দিয়েছে। অভ্যুত্থানের পরও কেন কোটিপতির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেই সমীকরণের রহস্য এখানেও আছে। যাঁরা উৎপাদন করেন, তাঁরা যেন কোনো এক আদি অভিশাপের দায় বহন করেন। এখানে সবটা সুবিধাভোগী মধ্যস্বত্বভোগীরা।

আলুতেও একই গল্প। ঢাকার বাজারেই এখন ৫ কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অথচ কৃষকেরা বিক্রি করে দিচ্ছেন ৮ থেকে ১০ টাকায়। অথচ আলু উৎপাদনে তাঁদের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৬ টাকা। হিমাগারগুলোয় জায়গা নেই। সুযোগ বুঝে মালিকেরা বেআইনিভাবে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে কৃষকেরা আলু রাখার জায়গা পাননি। সে সুবিধা মধ্যস্বত্বভোগীদের একচেটিয়া।
কৃষকেরা জানা-অজানা নানা উপায়ে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে আলু আরও কিছুদিন ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন। ১৯ এপ্রিল ডেইলি স্টারের লিড ছবিতে রাজশাহীর এক কৃষককে আলু রক্ষার লড়াই করতে দেখা যাচ্ছে। গাছের ছায়ায় শুকনা খড়কুটো রেখে তার ওপর আলু বিছিয়ে তার ওপর আবার খড়কুটা দিয়ে আলু সংরক্ষণ করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু এভাবে আলু রাখা যাচ্ছে না। পচে যাচ্ছে অনেকটাই।

পেঁয়াজের মতো এখানেও একই ঘটনা ঘটবে। চাষির গোলা আলুশূন্য হলেই বাজারে দাম বেড়ে দ্বিগুণ, তিন গুণ হতে থাকবে। হয়তো ছয় মাস পর আজ যে কৃষক তিন থেকে চার টাকায় আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁকেই ১০০ টাকায় কিনতে হবে। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? কিন্তু এটাই বাস্তবতা।

গত কয়েক মাসে আমরা বাজার থেকে কম দামে আলু, পেঁয়াজ, শীতের সবজি কিনতে পেরেছি। কিন্তু তাতে যে কৃষকের অশ্রু-দীর্ঘশ্বাস জড়িয়ে আছে, তা নিয়ে আমরা কি প্রশ্ন করেছি? পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য সবজির পর এবার বোরো ধান উৎপাদনেও সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। কিন্তু এ সফলতার পরেও তাঁদের কপালে দুশ্চিন্তার ভারী মেঘ ভর করতে শুরু করেছে। সরকার এবার কেজিতে চার টাকা বাড়ালেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেড় লখ টন কমিয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর দেশে সবচেয়ে অবহেলিত গোষ্ঠী কৃষক। শহুরে এলিটদের ভাবনায়, রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তায়, সরকারের অগ্রাধিকারে কৃষক নেই। একসময় বামপন্থী দলগুলোর বড় কৃষকসংগঠন থাকত। এখন কৃষকদের দাবিদাওয়া জানানোর মতো রাজনৈতিক কোনো সংগঠন নেই। তাঁদের কথাগুলো বলার জন্য কোনো প্রতিনিধি নেই। জিডিপিতে কৃষির অবদান হয়তো ১৫ শতাংশ, কিন্তু এখনো তো ৪০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী। ভোটের সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের আছে।

চার মাস ধরে কৃষকেরা যে অবর্ণনীয় লোকসানের ঘূর্ণিপাকে আছেন, তা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা আছে? কৃষিতে কোনো নেতৃত্ব আছে কিনা, সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ফলে কৃষক ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়লে কার কীই-বা আসে-যায়।

চালের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে, তার জন্য সরকার ধান-চালের দাম নির্ধারণ করে দেয় এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান-চাল কেনে। আলু, পেঁয়াজসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ফসলের ক্ষেত্রে এ রকম ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে এসব ফসলের দাম নির্দিষ্ট সীমার নিচে না নামে।

অন্নদাতাদের বাঁচাতে অন্তত এ পদক্ষেপটা আশা করতেই পারি আমরা।

● মনোজ দে প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD