দিনাজপুরে আগাম আলু চাষ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হালচাষ, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ ও বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। জেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এবার আলু বীজের দাম সর্বনিম্ন হলেও সার ও কীটনাশক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তবে মজুরের দাম আগের বছরের মতোই। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার ও কীটনাশক কিনতে পারলে খরচ আরও কমে যেত।
জানা যায়, কৃষকেরা আগাম জাতের আলু হিসেবে বিনা-৭, সানসাইন ও স্টারিজ জাতের আলুর বীজ বপন করছেন। বিগত বছরগুলোয় এ আলু বীজ সরকার জাতভেদে ৫৭ টাকা থেকে শুরু করে ৬৬ টাকা পর্যন্ত কেজি নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু কৃষককে কিনতে হয়েছিল ৮০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি। এবার সেই আলু বীজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি। সামনে আরও দাম কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সারের বিষয়ে জানা যায়, ডিলাররা ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকায় কেনেন, তবে বিক্রি করেন ১৩৫০ টাকায়। ডাই-অ্যামনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সরকারি মূল্য ৯৫০ টাকা হলেও বিক্রি হয় ১০৫০ টাকা। মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সরকারি মূল্য ৯০০ টাকা হলেও বিক্রি হয় ১০০০ টাকা। ইউরিয়া সারের সরকারি মূল্য ১২৫০ টাকা হলেও বিক্রি হয় ১৩৫০ টাকা।
তবে তিউনেশিয়ার টিএসপি ২০০০ টাকা, দেশি ২৪০০ টাকা; মরক্কোর ডিএপি ১৭০০-১৮০০ টাকা, দেশি ২০০০ টাকা; কানাডার এমওপি ১২০০ টাকা ও রাশিয়ার এমওপি সরকারি মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কোনো ডিলারই ভাউচার দিচ্ছেন না। ভাউচার চাইলে সার দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। এ ছাড়া কৃষক আলুর জমিতে গোবর সার, মিশ্রসার, জীপসাম, জিংক বা দস্তা, ম্যাগনেশিয়াম ও বোরন সার ব্যবহার করেন।
বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন কৃষকেরা। এরপর বীজ আলু লাইন ধরে রোপণ করছেন। ১ একর জমিতে ২৫-২৮ মণ বীজ আলুর প্রয়োজন হয়। তবে একরপ্রতি ১৪০-১৫০ মণ ফলন হয়। বীজ লাগানোর ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলেন চাষিরা। অগ্রহায়ণ মাসে আলু চাষের মৌসুম হলেও বেশি দাম পাওয়ার আশায় আশ্বিন মাসেই আগাম আলু চাষ করছেন তারা।
সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘এবার আলু বীজের দাম অনেক কম। তবে সার সরকারি মূল্যে কেনা গেলে আলু উৎপাদনের খরচ কমে যেত। ডিলাররা সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। আবার রশিদ চাইলে সার নেই বলে ফেরত দেন। তাই বাধ্য হয়ে রশিদ ছাড়াই বেশি দামে সার কিনছি।’
এ ব্যাপরে একাধিক ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘আলু বীজের দাম এবার বাজারে অনেক কম। সরকার এখনও আলু বীজের দাম নির্ধারণ করেনি। তাই বিএডিসির আলু বীজ এখনও গোডাউন থেকে বের হয়নি। একটি সিন্ডিকেট আছে, যে কারণে সার বেশি দামে বিক্রি হয়। ইচ্ছে করলেও কেউ একা কিছু করতে পারে না।’
সার বরাদ্দ ও বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি জানতে যুগ্ম পরিচালক (সার) মো. জাহাঙ্গীর আলমকে পর পর তিনদিন মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গত বছর ৪৭ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি বেশি দামে সার বিক্রি হয়ে থাকে, তাহলে খবর নিয়ে তদন্ত করে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। মাঠে আমাদের তদারকি টিম কাজ করছে।
Leave a Reply