জাম্বুরা অতি পরিচিত মৌসুমি ফল। দামে সস্তা, পুষ্টিগুণের বিবেচনায় অত্যন্ত মূল্যবান। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর জাম্বুরার মৌসুম। এ সময়ে বাজারে প্রচুর জাম্বুরা পাওয়া যায়। তাই তো রাঙ্গামাটির পাহাড়ে উৎপাদিত রসালো জাম্বুরার কদর বাড়ছে সারাদেশে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন হাটে মৌসুমি ফলের পাশাপাশি জাম্বুরায় ভরপুর। পাইকাররা প্রতিদিন রাঙ্গামাটি থেকে ৫-১০ ট্রাক জাম্বুরা নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন ফলের আড়তে।
রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ১ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে জাম্বুরা আবাদ হয়েছে। এতে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর রাঙ্গামাটিতে জাম্বুরার ফলন বেশি।
রাঙ্গামাটির দুর্গম লংগদু উপজেলার খাড়িকাটা ও বেগিছড়া থেকে নিজের ও প্রতিবেশীর বাগানের দুই নৌকা জাম্বুরা বিক্রি করতে বনরুপা বাজারের সমতাঘাটে এসেছেন জ্যোতিময় চাকমা। তিনি বলেন, ‘এ বছর জাম্বুরার ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম খুবই কম। গত বছর প্রতি পিস জাম্বুরা ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এ বছর একই জাম্বুরার পাইকারি দাম পাচ্ছি মাত্র ৫-১০ টাকা। এতে নৌকা ভাড়াও হবে না।’
রাঙ্গামাটির ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় অন্তত ১৫-২০ জন পাইকার আছেন। যারা শহরের বনরুপা সমতাঘাট থেকে জাম্বুরাসহ মৌসুমি ফল কিনে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ফলের আড়তে নিয়ে যান। এখানে কথা হয় ব্যবসায়ী ও আড়তদার নাজিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে উৎপাদিত জাম্বুরার চাহিদা আছে সারাদেশে। আমার ফলের আড়ৎ আছে চট্টগ্রামে। পাশাপাশি অন্য আড়তেও জাম্বুরা সরবরাহ করি। প্রতি বছর জাম্বুরার মৌসুমে ২ মাসের জন্য রাঙ্গামাটি থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করি। এখানকার জাম্বুরা সাইজে বড়, রসালো ও মিষ্টি হয়।’
পাইকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর তুলানামূলক কম দামে জাম্বুরা কিনতে পারছি। প্রতিদিনই রাঙ্গামাটি থেকে ১০ ট্রাকের মতো জাম্বুরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হয়। আমরা নিয়মিত রাঙ্গামাটির মৌসুমি ফল কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করি। তবে পরিবহন ও শুল্ক খরচ অনেক বেশি হওয়ায় খুব বেশি লাভ করা যাচ্ছে না।’
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জাম্বুরা গাছ পাহাড়ের মাটির জন্য পরিবেশবান্ধব। এ বছর জেলায় জাম্বুরার ফলন ভালো হয়েছে। তবে দুর্গম অঞ্চল ও অতি দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে চাষিরা ভালো দাম পান না। তাই চাহিদা থাকলেও পাহাড়ে জাম্বুরার বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা খুবই কম।’
Leave a Reply