বেশি বেশি আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান। আলু এখন মাত্র সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বস্তা, ৬ টাকা কেজি। আপনার হাতের নাগালেই কাশিপুর কোল্ড স্টোরেজে পাওয়া যাচ্ছে ৬ টাকা কেজি আলু।’ আজ রোববার বগুড়ার শিবগঞ্জে হিমাগারে রাখা আলু বিক্রি করতে এভাবেই মাইকিং করছেন বিক্রেতারা।
বসায়ীরা বলছে, কম দামে আলু বিক্রির জন্য মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা। আলু চাষিদের দাবি—লাভের আশায় হিমাগারে রাখা আলুতে লোকসান গুনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁদের।
জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত মৌসুমে শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মোট ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় বরাবরই বাম্পার ফলন হয়। এবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় উপজেলার ১২টি হিমাগারে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪০ টন আলু সংরক্ষণ করেছিলেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে হিমাগারে রাখা আলুতে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। হিমাগারে রাখা আলু শুরুর দিকে ৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা। এরপর ক্রমেই কমতে থাকে দাম। বর্তমানে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বস্তায়। তাই কৃষকেরা বলছেন আলু বিক্রির টাকায় উৎপাদন ও সংরক্ষণ খরচ না ওঠায় লোকসান নিয়েই এবার ফিরতে হয়েছে ঘরে।
উপজেলার টেপাগাড়ি গ্রামের আলু চাষি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘এবার সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বেশি ছিল। এ ছাড়া সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে সংরক্ষণ ফি সাড়ে ৩০০ টাকা, বস্তা ৭০ টাকা ও পরিবহন খরচ ৩০ টাকাসহ প্রতি বস্তায় বাড়তি প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে। তাই এবার আলুতে লাভ হয়নি। লোকসান নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে আমাদের।’
এ দিকে আলুর বাজার কম হওয়ায় লাভের মুখ দেখেননি ব্যবসায়ীরাও। উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের আলু ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, ‘জমি থেকে আলু সংগ্রহের সময় প্রতি বস্তা আলু ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনে হিমাগারে রেখেছিলাম। বস্তা, শ্রমিক ও হিমাগার খরচসহ প্রায় ১২০০–১৩০০ টাকা বস্তা প্রতি খরচ হয়েছে। লাভের আশায় হিমাগারে আলু রেখেছিলাম। কিন্তু দাম কম হওয়ায় ব্যবসায় লাভ হয়নি এবার।’
কাশিপুর গ্রামের নুরুল আলম নামের আরেক আলু ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে বাজারে নতুন আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। তাই হিমাগারের আলু কিনতে আসছেনা কেউ। ক্রেতা না থাকার কারণে আলু বিক্রিও হচ্ছে না।
জাবারিপুর গ্রামের শাজাহান আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি হিমাগার থেকে ৪০০ টাকা মন আলু কিনেছি। এসব আলু নিজেও খাব গরুকেও খাওয়াব।’
মোকামতলা কাশিপুর এলাকায় অবস্থিত আরএ্যান্ডআর কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা ইতিমধ্যেই হিমাগার বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু দাম কম হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের আলু নিয়ে যাননি। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার বস্তা আলু এখনো পড়ে আছে।’
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, ‘শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতিবছরই আলু উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। হিমাগারে রাখা আলুর বেশির ভাগই বড় ব্যবসায়ীরা কিনে বাইরে রপ্তানি করে থাকেন। গত মৌসুমে শিবগঞ্জ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। মূলত চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম পেয়েছে কৃষকেরা।
Leave a Reply