শুষ্ক মৌসুমে নদীতে জেগে উঠেছে চর। সেই চরের প্রায় ৬০ শতক জমিতে বেগুন, আলু, মুলা, টমেটো, মরিচ ও ঢ্যাঁড়সের চাষ করেছেন ৫৫ বছর বয়সী মমতাজ বেগম। চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তবে এরই মধ্যে সবজি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকার বেশি আয় করেছেন তিনি। পাইকারি বিক্রেতারা তাঁর খেত থেকেই সবজি কিনে নিয়ে গেছেন। খেতে থাকা বাকি সবজি বিক্রি করে আরও অর্ধলাখ টাকা আয় হবে বলে আশাবাদ তাঁর।
মমতাজ বেগমের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সুখছড়ি গ্রামে। শীত মৌসুমে তাঁর মতো এ উপজেলায় অবস্থিত টঙ্কাবতী নদীর চরে শাকসবজি আবাদ করেছেন দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০০ কৃষক। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নদীর দুই পাশের ২৮ হেক্টর চরের জমিতে চাষ করেছেন তাঁরা। কৃষি বিভাগের হিসাবে এসব জমিতে শীত মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার কেজি সবজি পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। লোহাগাড়াসহ আশপাশের উপজেলায় কদর রয়েছে টঙ্কাবতীর চরে উৎপাদিত শাকসবজির।
পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে উৎপত্তি হওয়া টঙ্কাবতী নদী মিশেছে সাতকানিয়া উপজেলার ডলু নদে। কৃষি বিভাগ বলছে, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে টঙ্কাবতীর দুই পাশের জমি ও চর পলিমাটিতে প্লাবিত হয়। এ কারণে শুল্ক মৌসুমে তুলনামূলক কম সার প্রয়োগ করেও ওই মাটিতে বাম্পার ফলন হয় শাকসবজির।
লোহাগাড়ায় টঙ্কাবতী নদী বয়ে গেছে আমিরাবাদ ও চরম্বা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। দুটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি জায়গায় নদীর চরে শাকসবজির চাষ হয়েছে। বাদাম, ঢ্যাঁড়স, মরিচ, ধনেপাতা, শর্ষে, মুলা, শিম, টমেটো, বেগুন, বরবটি, লাউ, কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আলুসহ নানা জাতের শাকসবজির চাষ করেছেন কৃষকেরা।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টঙ্কাবতী নদীর চরের একটি খেত থেকে লালশাক ও পালংশাক তুলতে ব্যস্ত আবদুল জলিল নামের এক কৃষক। তিনি জানান, ২৭ বছর ধরে তিনি টঙ্কাবতীর চরে শাকসবজির চাষ করছেন। এ বছরও নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন ৪০ শতক জমিতে। ২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন লালশাক ও পালংশাক। শাক বিক্রি করেই ইতিমধ্যে তিনি ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। সবজি চাষে লাভ তুলনামূলক বেশি। তিনি বলেন, চরে চাষ হওয়া সবজিতে কম পরিচর্যা করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। নদীর চরে চাষ করলে সেচ দেওয়া নিয়েও চিন্তা করতে হয় না।
টঙ্কাবতীর চরে উৎপাদিত হওয়া সবজির বেশির ভাগ বিক্রি হয় উপজেলার কানুরাম বাজার, পদুয়া বাজার ও বটতলী কাঁচাবাজারে। বটতলী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ তারেক বলেন, সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারা টঙ্কাবতীর চরের সবজি বেশি পছন্দ করেন। তাই দাম কিছুটা বেশি হওয়ার পরও চর থেকে সবজি কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে টঙ্কাবতীর চর থেকেই অন্তত এক লাখ টাকার সবজি কেনা হয় তাঁর।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, লোহাগাড়ায় এ বছর ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হেক্টর বেশি জমিতে। এর মধ্যে ২৮ হেক্টর আবাদ হয়েছে টঙ্কাবতীর চরে।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুপনা চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর চরের জমিতে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। চরের চাষিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন তাঁরা।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টঙ্কাবতীর চরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার কেজি। প্রতি কেজি সবজি গড়ে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হলে নদীটির চরে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকার ফলন হওয়ার কথা রয়েছে।
চর এলাকায় তিনজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, জমির উর্বরতা ধরে রাখতে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো
Leave a Reply