ফসলি মাঠে ধান গাছ দিয়ে জাতীয় পতাকার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সড়কে যেতে যেতে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে এ চিত্র দেখে অনেকে থমকে যান। কেউ কেউ সড়কে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মন দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন।
শস্যচিত্রটির নির্মাতা মো. এনামুল হক (৪১)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের বাসিন্দা। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল একই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তুলে তিনি আলোচনায় আসেন।
এনামুলের বাবা চার বছর আগে মারা গেছেন। মা জোহরা বেগম (৬৫) ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর শস্যচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন, প্রশংসাও করছেন কেউ কেউ
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, বেকাসাহারা গ্রামে সড়কের দক্ষিণ পাশের খেতে জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র। মাঝখানের বৃত্ত বানানো হয়েছে বেগুনি রঙের ধান গাছ দিয়ে। পতাকার খুঁটি তৈরি করা হয়েছে সবুজ রঙের ধান গাছ লাগিয়ে। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানি জমিতে যেন একটি জাতীয় পতাকা উড়ছে।
জাতীয় পতাকা শস্যচিত্রের নির্মাতা এনামুল হক বলেন, ২০২১ সালে প্রথম তাঁর এক বিঘা জমিতে বেগুনি ধান রোপণ করেন। পরের বছর মাকে ভালোবেসে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটি শস্যচিত্রে রূপ দেন। তখন তাঁর মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অনেক দর্শনার্থী সেই শস্যচিত্র দেখে প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে এ বছর জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র তৈরি করেছেন।
এনামুল হক বলেন, প্রথমে সুতা দিয়ে জমিতে জাতীয় পতাকার গঠন তৈরি করেন। এরপর সেই গঠন অনুযায়ী, রোপণ করেন দুই জাতের ধান গাছ। তাঁর সঙ্গে ধান রোপণে সহযোগিতা করেছেন আরও কয়েকজন। দেশ ও পতাকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেই এ আয়োজন।
গত শনিবার দুপুরে সড়ক থেকে জাতীয় পতাকার ছবি তুলছিলেন মো. মোবারক হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে শস্যচিত্র দেখতে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই এসেছে। চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন এনামুল হক।’
অপর দর্শনার্থী জিয়াউল ইসলাম বলেন, ধান রোপণের সময় তিনি এ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে ধান গাছ রোপণের দৃশ্য দেখেছেন। এরপর ধান গাছ বড় হওয়া অবস্থায় এই দৃশ্য আবারও দেখতে এসেছেন।
সন্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে এনামুল হকের মা জোহরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে শখ করে এগুলো করেছে। মা হিসেবে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। খারাপ তো কিছু করছে না। মানুষ তার প্রশংসা করে। আমিও তাকে উৎসাহ দিই।
সূত্র :প্রথম আলো
Leave a Reply