বাংলাদেশের সহজলভ্য সবজি চাল কুমড়া। গ্রামাঞ্চলে ঘরের চালে এর চাষাবাদ হয় বলে এই নামে পরিচিত পায় চাল কুমড়া।
এখন ছাদেও এটির চাষাবাদ হচ্ছে। তবে জমিতে (মাচায়) এর ফলন বেশি হয়।
বাংলাদেশে চাল কুমড়ার কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর ভাল হাইব্রিড চাল কুমড়া বীজ পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে ঘরের চালে এ সবজি গাছ উঠানো হয় বলে এটি চালকুমড়া নামে পরিচিত।
তবে জমিতে মাচায় এটির ফলন বেশি হয়। কচি চালকুমড়াকে জালি বলা হয়। এটি তরকারি হিসেবে এবং পরিপক্ব চালকুমড়া মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
মাটি নির্বাচন : চালকুমড়া চাষের আগে মাটি নির্বাচন করতে হবে। এটি দো-আঁশ মাটিতে চাষ করা হয়। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাদা মাটি ছাড়া যে কোনো মাটিতে চাষ করা যায় এটি।
আমাদের দেশে এখন সারাবছরই চালকুমড়া চাষ করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারি-মে মাসে এটি চাষের উত্তম সময়। এখন আমাদের দেশে ছাদেও এটি চাষ করা হচ্ছে।
জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে ঢিলা ভেঙে সমান করতে হবে। জমিতে মাদার উচ্চতা হবে ১৫-২০ সে.মি., প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমি সুবিধামতো নিতে হবে।এভাবে পরপর মাদা তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি মাদার মাঝখানে ৬০ সে.মি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে। পারিবারিক বাগানে চাল কুমড়ার চাষ করতে হলে মাদায় বোনার পর গাছ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোনো বৃক্ষের উপর তুলে দেওয়া হয়।
চাষাবাদের সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে চালকুমড়ার স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে ফলন কমে যায় সম্ভাবনা থাকে।
বীজ বপনের সময় : ফেব্রুয়ারি-মে মাসে এটি চাষের উত্তম সময়। এই সময় চাল কুমড়া চাষের উপযোগী সময়। তবে কিছু হাইব্রিড চাল কুমড়া বীজ পাওয়া গুলো ১২ মাস চাষ করা যায়
বীজ বপনের পদ্ধতি : চাল কুমড়া বীজ বপনের পূর্বে রোদে শুকানোর পর ৮-১০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। তবে, চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভালো হয় সেক্ষেত্রে ৮-১০ সেমি আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
* প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর দিয়ে পলিব্যাগ ভরে নিতে হবে।
* প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনতে হবে।
* বীজের আকারের দ্বিগুন মাটির নিচে বীজ পুঁতে দিতে হবে।
* পলিব্যাগে চারা করলে বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা জমিতে রোপন করতে হবে।
মাদায় সার প্রয়োগ
* উঠানে বা ছাদ বাগানে প্রতি মাদায় গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমপি ৫০ গ্রাম দিতে হবে।
* প্রতি শতাংশে গোবর যত দেওয়া যায় তত ভাল। এছাড়া ইউরিয়া ১০-১২ কেজি, টিএসপি ৮-১০ কেজি, মিউরেট অব
পটাশ ৩-৫ কেজি, জিপসাম ৩ কেজি, জিংক অক্সাইড ১০০-১৫০ দিতে হবে।
* ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বোনার ৭-৮ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
মাদার আকার
* ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি এবং তলদেশের ব্যাস ৪০-৪৫ সেমি।
* এক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ২ মিটার এবং প্রতি সারিতে ২ মিটার পর পর বীজ বপন করে হবে।
* ২-৩ সেমি গভীরে প্রতি মাদায় ২ টি করে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ৭ দিন পর সুস্থ চারাটি রেখে বাকিটা তুুলে ফেলতে হবে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ : চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে। মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।
নিয়ম মেনে চালকুমড়ার চাষ করতে পারলে ছাদে, ঘরের চালে কিংবা জামিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
Leave a Reply