1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
বাড়ির আঙিনায় আর পুকুরপাড়ে বস্তায় চাষ হচ্ছে কোটি টাকার আদা
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন

বাড়ির আঙিনায় আর পুকুরপাড়ে বস্তায় চাষ হচ্ছে কোটি টাকার আদা

  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫২ পড়া হয়েছে

শক্তিপদ রায় ও তাঁর স্ত্রী মল্লিকা রানীর বাড়ির চারপাশে রয়েছে এক একর জমি। সেখানে আম, লিচু, আমড়াসহ নানা ফলফলাদির গাছ রয়েছে। বাড়তি আয় ও কাজের মধ্যে থাকতে, বাগানে গাছের ফাঁকে সারা বছরই বিভিন্ন ফসল ফলান এই দম্পতি। এরই মধ্যে গত বছর শক্তিপদ তাঁর বড় ভাই মুক্তদেশ রায়ের কাছ থেকে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন।

নতুন কিছু পরখ করে দেখার আশায় মুক্তদেশের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন এই দম্পতি। প্রথমবার হলেও বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁদের। উৎপাদন খরচ উঠিয়ে মাত্র ১০ মাসে এই বাগান থেকে ১৫ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন শক্তিপদ-মল্লিকা দম্পতি। তাঁদের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার বামনহাটে। তাঁদের এ ‘বস্তার বাগান’ দেখতে প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাজলা নদীর তীরে শক্তিপদ-মল্লিকা দম্পতির বাড়ি। বাড়ির চারপাশ বড় বড় গাছগাছালিতে ভরা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে বস্তা। তাতে চাষ হচ্ছে আদা। ইতিমধ্যে আদা গাছ বড় হয়েছে, ফলনও আসতে শুরু করেছে। সেখানে কথা হয় মল্লিকা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়ির চারপাশে বাগান রয়েছে। বাগানে বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে বস্তায় আদা চাষ করছেন। এ ছাড়া ফাঁকা জায়গায়ও বস্তা পেতেছেন। সেখানে ছায়ার জন্য ধঞ্চে গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। এর আগেও তাঁরা এসব জমিতে অনেক ফসল করেছেন। তবে এ বছর ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করছেন। তাতে কৃষি বিভাগও সাহায্য করছে। এই চাষাবাদে তাঁদের পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছেন, আদা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা লাভ হবে।

মল্লিকা রানীর স্বামী শক্তিপদ রায় বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী মিলে এই চাষাবাদ করছি। এ বছর ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। একেকটি বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হয়েছে। ফলন দেখে মনে হচ্ছে, প্রতিটি গাছ থেকে দেড় কেজির মতো আদা পাওয়া যাবে। আদার দামও বর্তমানে ভালো। লাভ হলে পরে হয়তো ১২ থেকে ১৫ হাজার বস্তায় চাষ করব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বছর তিনেক আগে স্বল্প পরিমাণে এ জেলায় বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু হয়। পরে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্প্রসারণে কাজ শুরু করে কৃষি বিভাগ। এক বছর পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার বস্তায়। সেখান থেকে অন্তত ৩০ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।

কৃষি অফিস ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পদ্ধতিতে প্রথমে বস্তায় পরিমাণমতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং বেলে দোআঁশ মাটি দিতে হয়। এর সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হয়। একেকটি বস্তায় ২০ থেকে ২৫ কেজি মাটি দিতে হয়। পরে তাতে বীজ আদা রোপণ করতে হয়। একেকটি বস্তায় তিনটি চারা রোপণ করা হয়। বস্তাপ্রতি খরচ হয় ৫০ টাকার মতো। ফলন ভালো হলে দেড় কেজির মতো আদা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি আদা পাইকারি ৩০০ ও খুচরা ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।

শুধু শক্তিপদ-মল্লিকা দম্পতিই নন, আরও অনেকেই আধা চাষে ঝুঁকেছেন। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে বসতবাড়ির সামনে পুকুরপাড়ে সাড়ে ৬০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি তিনটি জাতের আদার চাষ করছি। গাছের গোড়ায় আদা আসছে, ফলন ভালো হবে। প্রতিটি বস্তায় এক কেজির বেশি আদা হবে। মোট মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কম করে হলেও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আদা বিক্রি করতে পারব।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আদা চাষে বেশি পরিচর্যা বা পরিশ্রম লাগে না। আর বস্তা পদ্ধতিতে করলে আগাছা বেশি হয় না। রোপণের পর সার প্রয়োজন হয় না। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত জায়গারও প্রয়োজন হয় না। তিনি পুকুরপাড়ে সুপারি ও অন্যান্য গাছের মাঝখানে আদা চাষ করছেন।

আরেক আদাচাষি অলিয়ার রহমানের বাড়ি জুড়ুলিয়া গ্রামে। তিনি প্রবাসে ছিলেন সাত বছর। দেশে ফিরে ইউটিউব দেখে বাড়ির আঙিনায় প্রায় ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হয়েছি। কারণ, এ বছর অনেক বৃষ্টি হয়েছে। যদি সাধারণভাবে আদা চাষ করতাম, বৃষ্টিতে সব পচে যেত। মাটির তুলনায় বস্তায় ফলনও দ্বিগুণ।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে খরচ অনেক কম, আবার ফলন অনেক বেশি। অনাবাদি পতিত জমিতে চাষ করা যায়, অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন পড়ে না। পরিচর্যা করাও অনেক সহজ। এ ছাড়া বাজারে আদার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বর্তমান বাজার মূল্য অনেক ভালো। মূলত, এসব কারণেই চাষিরা এ পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চাষাবাদ সম্প্রসারণে কৃষকের সঙ্গে থেকে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছেন, আগামী বছর দ্বিগুণ বস্তায় আদা চাষ হবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD