1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
পরিযায়ী পাখিদের রক্ষায় করণীয়
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ন

পরিযায়ী পাখিদের রক্ষায় করণীয়

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ২২ পড়া হয়েছে

‘পাখি সব করে রব রাত্রি পোহাইল, কাননে কসুম কলি সকলি ফুটিল।’ ছোটবেলা সুর করে কবিতাটি পড়তে খুব পুলক অনুভব হতো। নদী-খালের কাদা জলে বেড়ে ওঠা গা নিংরানো মানুষ হিসেবে কবিতার সাথে বাস্তবের এ মিল দেখে নিজেকে বড় ধন্য মনে হতো। এমন একদিন ছিল যখন হাওরবাসীর ঘুম ভাঙতো পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ডানা ঝাপটানোর কোলাহলে। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, আর পুকুর ভরা মাছ একমাত্র হাওর এলাকায় বাস্তব ও পরিপূর্ণ ছিল। ছিল দিগন্ত জোড়া নয়নাভিরাম সবুজ মাঠের সমারোহ, চাইল্লা গাছের গো-চারণ ভূমিতে রাখাল বালকের সাথে লুকোচুরি খেলা। আকণ্ঠ জলমগ্ন হিজল তমাল আর নল খাগড়ার বন। শীতের হিমেল নীলাকাশে-মুক্তোর মালার ন্যায় উড়ে বেড়ানো সব জংলি হাঁসের দল। বিচিত্র রঙের পাখি, সাদা ধবধবে এক পায়ে দাঁড়ানো ঋষি বকের ধ্যানমগ্ন দৃশ্য, কাকের চোখের ন্যায় কালো স্বচ্ছ জলে পানকৌড়ির জলক্রীড়া আর পানিফল শুধু হাওর এলাকায় দেখা সম্ভব। বিরাট বিশাল চারণ ভূমিতে রাখাল বালকের মেঠো সুর আমাদের বিমোহিত করে তুলতো।
সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাওর এলাকায় প্রতি বছর শীতের শুরুতে আসে লাখ লাখ পাখি। এসব পাখি আসে একটু আশ্রয়, আহার আর ডিমে তা দিতে। পাখিরা মিলন আর ঐক্যের বার্তা নিয়ে ছুটে আসে লক্ষ মাইল পাড়ি দিয়ে। পাখির জীবন ও তার বাঁচার আচার-আচরণ বড় দূর্বোধ্য। দেশে দেশে কালে কালে পাখিদের নিয়ে কত কথা, কত কাহিনি, কত গান সৃষ্টি হয়েছে তার সঠিক হিসাব কে রাখে? সৃষ্টির আদিকাল থেকে পাখিদের সেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা-যাওয়া মানুষকে ভাবাতুর করে তুলেছে।

পাখি বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে এক সময় ১৬ লাখ প্রজাতির পাখি ছিল। বিলুপ্ত হতে হতে কোনোমতে টিকে আছে মাত্র সাড়ে ৮ হাজার প্রজাতির পাখি। কারো মতে, বাংলাদেশে ৬ হাজার ৫৮০ প্রজাতির পাখি বিদ্যমান। অন্যমতে, ২৫০ প্রজাতি আসে বিদেশ থেকে অর্থাৎ পরিযায়ী পাখি। যেসব অতিথি পাখি আসে তাদের মধ্যে ২০-২২ প্রজাতি হলো জংলি হাঁস। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো গোলালি রাজহাঁস, চখাচখি, লেনজা, জিরিয়া প্রভৃতি। পাখিদের এই যে আসা-যাওয়া তা সৃষ্টির এক গভীর রহস্যে ঘেরা। কী এক অদৃশ্য টানে একই সময়ে, একই স্থানে ফিরে আসে বার বার। কিন্তু আমরা কি এদের প্রতি সঠিক আচরণ করছি? শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা, খাদ্যাভাব আর নতুন প্রজন্মর ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যেই ওদের আগমন। এসব পাখি হাওরে কিসের বার্তা নিয়ে আসে? আজ হিসাব করার দিন এসেছে।
আমরা জল সেচে, কাদা খুড়ে মাছ ধরছি। সারাদেশের বনাঞ্চল উজার, নদী বিল ঝিল হাওরা বাওড় ভরাট করে শুধু কি পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করছি? পাখিদের আবাস বা বাসা নষ্টের সাথে মানুষ তাদের নিজেদের অস্তিত্বের মূলেও কুঠারাঘাত করতে চলেছে। মানুষের জীবন চক্রের সাথে পশু পাখিদের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। একটির ধ্বংসে অপরটির বিনাশ অপরিহার্য। ফুড চেইন নষ্ট হলে পরিবেশের ওপর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া অপরিহার্য। আমরা এসব কাজের সাথে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। আজ হাওর অঞ্চলসহ সারাদেশের পাখিদের আবাসস্থলের কী অবস্থা আমরা করেছি? ধ্বংস করা হয়েছে বন, ভরাট করা হয়েছে জলাশয়, নির্বিচারে বীর বাহাদুরী করতে হত্যা করা হয় নিরীহ শান্তিপ্রিয় এসব অসহায় পাখিদের।
বাঙালি জাতি অতিথিপরায়ণ বলে জানি। এক পয়সাও না নিয়ে সমগ্র ভূ-ভারত ভ্রমণ করা যায় বলে শুনেছি। তবে আমরা আমাদের অতিথিদের প্রতি কী রকম আচরণ করছি। তাদের আমরা ফাঁদ পেতে, গুলি করে হত্যা করছি। এই পাখিরা কী এমন ক্ষতি করে থাকে। তারা তো ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ভক্ষণ করে বরং আমাদের উপকারই করে থাকে। পাখির সাথে মাছের সম্পর্ক সম্পুরক, একটির সংখ্যা কমলে অন্যটিও কমবে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ সাবার করে এরা আমাদের ফসলকে রক্ষা করছে। বাঁচিয়ে দিচ্ছে লাখ টাকার কীটনাশকের আত্মঘাতি বিরূপ পরিবেশের হাত থেকে। হাওরের নল-খাগড়া আর হিজল তমালের বাগান ধ্বংস হয়েছে। বিস্তীর্ণ চারণভূমি পরিণত হয়েছে সবুজ সমারোহের মাঠে। কালো জলের আধার বিল-ঝিলগুলো ভরাট হয়েছে, পাখির আবাসস্থান সংকীর্ণ করে দিয়েছি। এক শ্রেণির সৌখিন অবিবেচক শিকারী নির্বিচারে হত্যা করে পাখিদের। এক মুহূর্তে পাখিদের শান্তিতে আহার করতে দেয় না, দেয় না ডিমে তা দেওয়ার সুযোগ। বন কেটে পরিষ্কার করায় প্রজনন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কটি পাখি বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হয়, তা-ও ধরে নিয়ে যায় মানুষ।

অনেকে হয়তো পরিযায়ী পাখিদের উপকারের সাথে অপকারের কথাও বলবে। হাওরের বেকার, বে-রোজগারী লোকজনের অনেকেই এ পাখি ধরে বিক্রি করে। এতে তাদের সংসার চলে। অনেক সময় জমিতে নতুন চারা ধানের রোপণকৃত ক্ষেত নষ্ট করে ফেলে পাখিরা। পাকা ধানও অনেক সময় মাড়িয়ে দেয়। এই যুক্তিতে পাখি হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। আবার দেখেছি, জমিতে কীটনাশক ব্যবহারেও অসংখ্য পাখির মৃত্যু হতে। ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে বিমান থেকে ওষুধ ছিটানোর সময় হাজার হাজার অসহায় পাখির মৃত্যুর করুণ আহাজারি, বাঁচার আকুতি প্রত্যক্ষ করেছি। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ, আমলা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ পাখি শিকার করতে এ অঞ্চলে ছুটে আসেন। পূর্বেকার রাজা-বাদশাহদের হাতি শিকারের ন্যায় বর্তমানেও চলে পাখি শিকারের মহড়া।
চর্বিবিহীন নরম হাড্ডি সর্বস্ব এ পাখিদের মাংস অতি লোভনীয়। অনেক অসাধ্য সাধন হয়ে থাকে এ পাখি উপহার বা ভ্যাটের মাধ্যমে। বর্তমানে নতুন টেকনিকে চলে পাখি উপহারের খেলা। পাখি হত্যা করে বরফায়িত করে হয় আদান-প্রদান। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় চলে পাখি শিকার ও ক্রয়-বিক্রয়। বর্তমানে সরকার পরিযায়ী পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ জন্য হাওর এলাকাসহ সর্বত্র পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে। যেখানে পাখি নির্ভয়ে আহার করবে, ডিমে তা দেবে। কেউ তাদের বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। আর যেসব বেকার লোকজন এ পাখি শিকারের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে, মানবিক গুণাবলিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। হাওরের এসব অভয়ারণ্য ও কালো-স্বচ্ছ অফুরন্ত সমুদ্রসম জলরাশিকে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করে আকর্ষণ করতে হবে হাজার লক্ষ পর্যটকদের। সর্বোপরি মানুষজনের কাছে পাখিদের মানবিক আবেদন ছড়িয়ে দিতে হবে। পরিবেশ ও নিজেদের নিরাপদে বাঁচার জন্যই তা করতে হবে এবং যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD