1. admin@ritekrishi.com : ritekrishi :
  2. ritekrishi@gmail.com : ritekrishi01 :
দিনাজপুরে লিচুবাগানে পড়ে আছে হাজার হাজার মৃত মৌমাছি
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

দিনাজপুরে লিচুবাগানে পড়ে আছে হাজার হাজার মৃত মৌমাছি

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৮ পড়া হয়েছে

কাঠের তৈরি আয়তাকার বাক্সের ভেতরে মৌমাছির চাক। বাক্সটির ওপরের অংশ প্লাস্টিকের ছাউনিতে মোড়ানো। আরজু আলম (৩৫) প্রতিদিন সকালে বাক্স খুলে দেখেন মৌমাছিগুলো সুস্থ আছে কি না কিংবা চাকে থাকা রানি মৌমাছির অবস্থা কী। কেমন আছে কর্মী মৌমাছিগুলো। চাকে মধুই–বা জমেছে কতখানি। তাঁকে দেখে মৌমাছির ভনভন শব্দ বেড়ে যায়। তবে দেড় সপ্তাহ ধরে সেই ভনভন শব্দ আর নেই। বাক্সের আশপাশে পড়ে আছে হাজার হাজার মৌমাছির নিথর দেহ।

মৌচাষি আরজু আলমের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার লামকান গ্রামে। ২০১০ সালে ১৫টি বাক্স নিয়ে শুরু করেন মৌমাছির খামার। এরপর কেটে গেছে দেড় দশক। তাঁর খামারে এখন ২০০টি বাক্স। প্রতি মৌসুমে অক্টোবরের শেষ সময় থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মৌবাক্স নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করেন আরজু।
আরজু এবার লিচুর মৌসুমে গত ২০ মার্চ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জোড়কালী এলাকায় খামার বসিয়েছেন। মধু বিক্রির টাকায় চলে তাঁর পাঁচজনের সংসার। কিন্তু মৌমাছিগুলো মারা যাওয়ায় সেই আয়ের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আরজুর দাবি, খামার স্থাপনের তিন দিনের মাথায় লিচুগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন বাগানমালিক। সেই কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা পড়েছে খামারের সব মাছি।

গতকাল  সকালে সংশ্লিষ্ট এলাকার লিচুবাগান ও মৌখামার ঘুরে দেখা যায়, খামারে প্রতিটি বাক্সের চারপাশে হাজার হাজার মৌমাছি মরে পড়ে আছে। কয়েকজন কর্মচারী বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে থাকা চাকগুলো বের করে স্তূপ করে রাখছেন। বাগানের এক পাশে তাঁবু টাঙানো হয়েছে। মৌয়াল আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা শেষ হয়ে গেলাম। মধু না পেতাম, তাতে সমস্যা ছিল না। কিন্তু এতগুলো বাক্সে আবার মাছি জোগাড় করা কঠিন হয়ে যাবে। মৌসুম শেষে মাছিগুলোকে চিনির শিরা খাওয়ানোসহ নানা পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ওই সময়টাতে অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না আমাদের। একটি বাক্সে সাধারণত আটটি ফ্রেম (ঢাল) থাকে। মাছিসহ কিনতে গেলে একটি বাক্সের খরচ পড়বে বর্তমান বাজারে সাত থেকে আট হাজার টাকা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৫ হাজার ৪৫০টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টরে, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৭০ হেক্টরে, চায়না থ্রি ৮০৫ হেক্টরে, বেদানা ৩১৮ হেক্টরে, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টরে এবং মোজাফফরি লিচুর বাগান আছে ১ হেক্টর জমিতে।

১৫ বছর ধরে এ অঞ্চলে লিচুর মধু সংগ্রহে আসছেন মৌয়ালরা। মৌসুমে চাষিরাই তাঁদের আসতে উদ্বুদ্ধ করেন। মৌয়াল আরজু আলম বলেন, ‘এবারে লিচুতে মুকুল বেশি এসেছে। লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহে আমরা সময় পাই সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ দিন। এই সময়ে দেড় হাজার বাক্স থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ টন মধু সংগ্রহ হওয়ার কথা। প্রতি টন সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা বাজার পেলেও প্রায় ৬০ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারতাম। আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি মাত্র দুই থেকে আড়াই টন। কর্মচারীসহ ১০ জন আসছি। এবার ঈদও খামারেই কেটেছে আমাদের। ৫ এপ্রিলের পর কীটনাশক দিলে সমস্যায় পড়তে হতো না। তত দিনে আমরা সংগ্রহ শেষ করতে পারতাম। কিন্তু এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।’

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, লিচুর ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছির ভূমিকা অনেক বেশি। এ বিষয়ে চাষি ও মৌয়ালদের মধ্যে বিগত দিনগুলোয় সমন্বয় ছিল। ২৩ মার্চ মৌয়ালেরা গাছে কীটনাশক প্রয়োগের কথা জানালে তিনি নিজে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগে নিষেধ করেন। কারণ, তখনো গুটি বের হয়নি। সাধারণত গুটি মোটরদানার মতো আকৃতিতে এলে এই স্প্রেটা করার কথা। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Error Problem Solved and footer edited { Trust Soft BD }
More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত - রাইট কৃষি-২০২১-২০২৪
Web Design By Best Web BD